পিতৃতর্পণ

চার কাহারে বয়ে নিয়ে যায় - একটি সময় আমি তার পা ছুঁয়ে থাকি গাছের পাতার মতন সমস্ত শরীর জুড়ে জমেছে লোনা জল| শহরের তাপ শুষে বালুতে রক্তকরবি - আর পায়েচলা গ্রামপথে খালি গা বালকের গলায় চন্দ্রহার - ভাষা অবান্তর শুধু রক্ত মাংস ঘাম আর অদম্য ভালোবাসা বুকে মানুষকে আলিঙ্গন | অতন্দ্র লেদ মেশিনে জমা কান্নার আর দাঁতে দাঁত চেপে ধরে থাকা হাত - প্রতিটি রক্তক্ষরণের প্রতিদান রক্ত গোলাপ আর শিশু করতালি মধ্যরাত্রে সসাগরা দূরভাষ - তোর জন্যই এই মানবজমিন তোর জন্যই জংলা ফুলের গন্ধ আর পায়ে পায়ে ঘরে ফিরে আসা তোর জন্যই - বন্ধুতার অমূল্য উচ্চারণ ...

জন্মদাগ ২০২২  ( ২১ শে ফেব্রুয়ারি ) 

একুশ আমার এক গালে টোল অন্য গালে চুমু এলান চুলে জট ফাগুন হাওয়া যা উড়ে যা ভিনদেশে যা বাতাস করিস হারিয়ে যাওয়া ওদের গদ্য হয়ে পাথর হয়ে একলা বসে যারা অবান্তর আমারই কথা ভাবে একুশ আমার চোদ্দ আনা কুড়িয়ে পাওয়া মানিক আদরে আর আহ্লাদে এক নাছোড় বাউলমেলা দীঘির জলে তলিয়ে গেছে সময় যেমন হারায় না থাকা সেই কাজলাদিদির স্মৃতি একুশ আমার এক গালে টোল অন্য গালে চুমু এবং এখন চোখের কোনে কালি ডালাস 

পলাশ

পলাশ দেখলেই আমার পা আঁটকে যায় থমকে দাঁড়ায় সময় আর একছুট প্রান্তিক স্টেশন পলাশ দেখলেই আমার বুক কেঁপে ওঠে ঠোঁট কামড়ে আঙুল রক্ত আর হৃদয়জোড়া অনাবিল পাপ পলাশ দেখলেই তাকে তুলে নিই স্বার্থপরের মত যাতে তোকে পরিয়ে দিতে পারি পলাশ দেখলেই আজকাল দুদন্ড দাঁড়িয়ে থাকি মনে হয় আর একবার যদি ঠিক ওখান থেকেই সব শুরু করা যেত ডালাস 

জন্মদাগ ১ 

আমাকে তুমি অনেক দিয়েছো জটাধারী অশ্বথ গাছ - বুকভরা নদীগর্ভ মাতৃস্নেহ সাতমহলা বাড়ি - সন্তান - ভালবাসবার মত নারী স্পর্শ করবার মত প্রসারিত হাত নিঃস্বাস নেবার মত সবুজ বাতাস আকাশের ঘন নীল রঙ উদাসী বিকেলে ডুব দিয়ে খুঁজে পাওয়া কুমিরডাঙ্গা - হারানো আলপথ আর মোহনবাগান লেন মিলেমিশে আমাদের ছেঁড়া খোঁড়া পূর্ব কলকাতার সরকারি আবাসন মায়াবী আলো মেখে গোল্লাছুট সিলিকন ভ্যালি আমাকে তুমি অনেক দিয়েছো তাই তোমাকে দেবার জন্য খুঁজে এনেছি - এই দ্যাখো জন্মঘুনসী আর জড়িয়ে রাখা আঙুলের নির্ভরতা ডালাস

শাসকের জন্মদাগ 

যে নামেই ডাকো আমি তাঁর গলার স্বর চিনি চোখের ওপরের কাটা দাগ জন্মের দাগ - সব চিনি যে চাঁচাছোলা ভাষায় তিনি প্রজন্মের ভবিষ্যৎ ঠিক করে দেন বলে দেন কতোটা দাড়ি থাকলে ঈশ্বর সন্তুষ্ট হবেন কিম্বা কতো কাঞ্চনমূল্যে ঠাকুরের দুই চোখ চকচক করে ওঠে এবং কতো ইঞ্চি ঢাকা যাবে মুখ ইচ্ছায় এবং অনুমতি ক্রমে তিনি নিদান দেন মানুষের জন্ম মৃত্যুর চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দেন কতো মানুষের মূল্যে কেনা যায় আদর্শ মশনদ আর কিভাবে শিশু সৈনিকদের ফেলে ছড়িয়ে পোয়াতি সময়ের গর্ভ থেকে টেনে বের করতে হয় ভ্রূণ যে নামেই ডাকো আমি তার গলার স্বর চিনি চোখের ওপরের কাটা দাগ জন্মের দাগ - সব চিনি খুব ভাল করে চিনি !!! ডালাস 

জন্মদাগ ২

গঙ্গা ভলগা আর হাডসন বেয়ে ভেসে যায় লখিন্দর ভেলা পথভুল করে নাকি কপালের অমোঘ লিখন ? কোন জলে জল মাপে নেতা আর দালালের দল ? জুঁই আর বেলফুল নিয়ে তারা কোন ঘরে কার কাছে যায় - কেন যায় ? রাত কত হলে তারারা ঘুমিয়ে পড়ে আর শহরের রক্তে মিশে যায় কালনাগিনী বিষ পরদিন ভোরে মেলে না হিসেবে কিছু আর বিধবার বেশে এই জনপদে বিক্রি হয় বেহুলা সুন্দরী আমি এই ফেসবুক সময়ের ভিড়ে মানুষকে খুঁজি ঈশ্বর অথবা শয়তান নয় - কোনো নাগরিক লিস্ট নয় আমি সেই বন্ধু মানুষকে খুঁজি যার রক্তের রং কেবলই লাল অন্য কোনো কিছু - কানাকড়ি নয় - সেটুকুই হোক আমাদের প্রথম ও শেষ পরিচয় ডালাস

জন্মদাগ -৩ 

এখনো পাতার রং সবুজ - এখনো হাওয়ার স্বাদ নীল যেভাবেই দেখি আমি স্বপ্নের মধ্যে সেই গাছটিকে দেখতে পাই বিস্তীর্ন আকাশ জুড়ে ডালপালা ছড়িয়ে সূর্যের উত্তাপ শুষে নিয়ে মাতৃসুখে ছায়া বিতরণকারী সেই গাছ - বয়েসের আন্দাজ করা বৃথা - জাত কুল শুধানো অবান্তর কিন্তু এখনো তার পাতার রং সবুজ - হাওয়ার স্বাদ নীল অনেকে তার নিচে বসে কীর্তন গান করেন খাতা পত্র খুলে পাই-পয়সার হিসাব - ওয়ার্ল্ড ট্রেড রাজনৈতিক ত্রিকোণমিতির কোন - অকারণ কেউ বা পরচর্চা - সম্পর্কের জটিল উত্তর কেউ সিঁদুর মানত করেন - কেউ সুতো বাঁধেন কেউ গভীরভাবে ভালবাসেন কেউ বা সন্ধ্যার অন্ধকারে শত্রুর গলার নলি কেটে দোষ দেন অন্য সম্প্রদায়ের নামে মাইক বাজিয়ে আর সন্ধ্যা গাঢ় হলে এক মাতাল সিঁদুর সুতো আর রক্তের দাগের মধ্যে নিয়মিত জলত্যাগ করে তবু পরদিন ভোর হয় নিজের নিয়মে পাখিরা নিজের খেয়ালে উড়ে আসে দোল খায় শিশুটি স্পর্শ করে গাছের কোমর - পরিস্রুত করে কবিগান কীর্তনের সুর ওঠে - মাঝে মাঝে এমনকি ফেসবুক পেরিয়ে পুরোন বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় - গাছতলায় সমস্ত দিন পরে মধ্যরাতে যেভাবেই দেখি স্বপ্নের মধ্যে সেই বুড়ো গাছ তার বুকের শিরায় ধমনীতে আর কিছু নয় নামগোত্রধর্মহীন শুধু মানুষের ঠিকানা লেখা এখনো তার পাতার রং সবুজ - তার হাওয়ার স্বাদ নীল ডালাস 

জন্মদাগ ৪

এই নাও যা চাও সমস্ত জন্মের সঞ্চয় একটু একটু করে জমানো বাসের টিকিট সোঁদা গন্ধ টপকে দীনবন্ধু ব্লাইন্ড লেন ডান হাতে দক্ষিনেশ্বরী প্রেস ফেলে বাঁ দিকে উত্তাল মিছিলের স্রোত উষ্ণতা নাম ছিল একদিন তার আর বাতাসে ওড়ানো রূপকথা রঙিন ফানুস শহরের কবিগান হয়ে সন্ধ্যামালতীর মতো আমাদের সমস্ত শরীরে আমি তার হাত ধরে শুদ্ধ হয়ে পুণ্যতা বিসর্জন দিয়েছি চোয়াল শক্ত করে কান্না লুকিয়ে বেহুলার মাথায় পরিয়ে দিয়েছি লাল জবাফুল আর আলীর দোহাই বলছি অবিন্যস্ত শিশুটিকে দিয়ে দিয়েছি পূজার উপাচার একশো আট পদ্মের নীল নিবেদন আর তাই এখন এইসব খুদকুঁড়ো নিয়ে দেবার জন্য উপুড় করেছি দুইহাত উদগ্রীব হয়ে বসে আছি স্টেশনের ধারে 

জন্মদাগ ৫

ঠিক ততটুকু সুখ পাবে যতটুকু চাও গণ্ডুষ ভর্তি করে তাকে পান কোরো রেখে দিও হৃদয়মাঝে পদ্মসিংহাসনে জল দিও প্রতিদিন তুলসীর স্নেহে বাতাসের দোষ যেন না লাগে তাহার আঁচলে আড়াল কোরো অন্ধকার থেকে চাও বা না চাও তবু সাক্ষাৎ হবেই শরীরে জলের দাগ – বানভাসি বেলা গোধূলির ক্যানভাসে গঙ্গাজলে ডুব সময় – জন্মান্তর আর অন্যদিকে তুমি ঠিক ততটুকু সুখ পাবে যতটুকু চাও গণ্ডুষ ভর্তি করে তাকে পান কোরো 

জন্মদাগ ৬

( নবনীতা দেবসেন চলে গেলেন – তাঁর সঙ্গে ব্যাক্তিগত আলাপ না থাকলে ও – কেমন জেন কাছের মানুষ মনে হত। আসলে বড় মাপের মানুষেরা বোধহয় এমনি হন – ডুরে থেকেও কাছের হয়ে যান – হয়ে থাকেন – যেন অনায়াসেই নবনিতাদি বলে ডেকে ফেলা যায় – যেত ) আমাদের গলির আকাশে এখন ধোঁয়া শরীরে বদরক্ত বাতাসে বেলেল্লা সুর জঘন্য টিটকিরি খোলা ম্যানহোল দিয়ে বের হতে হতে আমাদের গায়ে মাথায় পায়ে জমেছে পাঁক আর মিথ্যায় ডুবে সময়ের শব তবু কেউ হেঁটে যান মাথা উঁচু করে একবুক আদর দিয়ে যত্ন করে জ্যোৎস্না ছড়িয়ে দিয়ে যান আমাদের ছেঁড়া খোঁড়া শহরে শহরতলিতে এতটুকু স্পর্শে শুদ্ধ হয় মানবজমিন আমাদের গলির আকাশে এখন চাঁদ আর সবকিছু ফেলে তিনি চলে যান এতটা আদর বুকে ছিল তাই সরিয়ে দিয়েছো অবিশ্বাস জ্যোৎস্না ভেজানো টানটান চুল বেঁধে মাথা উঁচু করে সমস্ত কষ্ট বুকে ধরতে শেখাতেন ডালাস