জন্মদাগ ৭ 

দুঃখ করার ধাত নেই আমার একটুও তোমার জন্য নিজের জন্য কিংবা অন্য কারো বড় রাস্তায় ধুলোর সঙ্গে ফুল পাওয়া যায় জমে থাকে আলোকিত সময়ের দাগ আমি তার ফুটপাথে হাঁটি দোকানের কাঁচে মুখ দেখি আর খুব কান্না পেলে – ভিড়ের মধ্যে আরো জোরে পা চালাই কষ্ট করে হারিয়ে যাই – হারানোটাই মানায় দুঃখ করার ধাত নেই আমার তোমার জন্য নিজের জন্য কিংবা অন্য কারো ডালাস 

জন্মদাগ ৮

তুমি অভিশাপ দাও আমি মাথা পেতে নেব নেব সবটুকু যা কিছু পাওয়া যাবে কিংবা অসম্ভব বলে বাদ দেওয়া অজন্তা বিশাখা থেকে গান্ধার নগরে পায়ে পায়ে সবুজ সমুদ্র ছুঁয়ে মেঘরাজা – রানীদের দেশে ভালোবেসে ঠোঁট রেখে পাথরের ঠোঁটে আর চেটে পুটে সবটুকু নিয়ে ভাঙাচোরা অলি গলি বিধান সরণি একা একা পথচলা নদী কপালের একথাবা সিঁদুরের দাগ দিয়ে বেড়াচাপা প্রান্ত স্টেশন আলীর দোহাই ভাল থেকো দিতে হলে হাত ভরে অভিশাপ দিও সমস্ত রাত্রি ধরে আমি বুক পেতে নেব ডালাস 

জন্মদাগ ৯

জন্মলগ্নে লেগেছে দাগ তোকে ছেড়ে কোথায় যাব বল ? পায়ে পায়ে জমা জল পেরিয়ে ফেরার ঠিকানায় হলুদ ট্যাক্সি প্রান্তিক স্টেশন অকথ্য গালাগাল অল্প আলোয় সিগারেট কেনা তারপর অনেকটা হেঁটে আঁকাবাঁকা পিচপথ পেরিয়ে পুকুরপাড়। পুণ্যিপুকুর – বলা কথা না বলা উচ্চারণ এরপর বাকি থাকে শেষ ট্রেনে বেপাড়ার চেনা মুখ সাথে নিয়ে বাড়ি ফেরা – জলপায়ে – পকেটে কলম আর একবুক পাথর নিয়ে বাড়ি ফেরা জন্মলগ্নে লেগেছে দাগ তোকে ছেড়ে কোথায় যাব বল ? ডালাস 

জন্মদাগ ১০

আমি বারবার তোর কাছেই ফিরে ফিরে আসি একঘেয়ে বটে নেহাত আটপৌরে জীবন যাপন একচিলতে বারান্দা লোহার গ্রিল – সকালের নরম রোদ্দুর তাতে পা ডুবিয়ে ফুসফুস ভরে দীর্ঘশ্বাস আমি বারবার তোর কাছেই ফিরে ফিরে আসি যত রাগ অভিমান – অপমান – অসহায়বোধ দুহাতে ফুলের মত মালা জপে ভাসিয়ে দিই নদীটির জলে আমি বারবার তোর কাছেই ফিরে ফিরে আসি ভালোবাসি বুকে চেপে ধরি বছরে একবার করে তোলপাড় করে এক সাথে কাঁদি আমি বার বার তোর কাছেই ফিরে ফিরে আসি বাড়ি ফেরার রাস্তা এভাবেই স্টেশন রোড থেকে ট্রামলাইন ঘুরে কৈশোরকাল এসে থামে ডালাস 

জন্মদাগ ১১

সঙ্গে যারা ছিল তারাই জানে পাথর কেটে রাস্তা গড়ার মানে জানলা দরজা উঠোনে চৌকাঠে লতায় পাতায় জড়িয়ে আছে সুখ মেঘের মতন জল জমেছে মনে নদীর মতন বয়ে চলেছে একা সঙ্গে যারা ছিল তারাই জানে একসঙ্গে বয়ে চলার মানে কুড়িয়ে পেলাম তোমার একা মুখ পাথরচাপা – অশ্রুজলে ভেজা বালুর বুকে জংলা ফুলের সাধ গাছ হয়েছে মাথার জঙ্গলে সঙ্গে যারা ছিল তারাই জানে অপাপবিদ্ধ জীবনখানির মানে ডালাস 

জন্মদাগ ১২

এখনো বৃষ্টি সেই আঙিনায় ঝরে ? গোধূলির ট্রেন সিগন্যালে থেমে যায় ? তোমার চিবুকে তিল ও জ্যোৎস্না ফোটে ? বুক ভার হয় – ঠোঁটে কি রক্ত জমে ? আমি জানি সেই শহরের লোকে ভালো আদরে সোহাগে আগলে রেখেছে তোমায় তুলসী তলায় প্রদীপ জ্বলেছে রোজ নিকোনো উঠোনে শ্যাওলা জমে নি কোনো আমি আজ ও চলি যেদিকে দুচোখ যায় পায়ে পায়ে আর সময়ের হাত ধরে যদি দেখা হয় – সিগন্যালে ট্রেন থামে দিয়ে যাবো তোকে গোধূলি ট্রেনের আলো ডালাস 

জন্মদাগ ১৩

বরং খানিকটা দূরেই থেকো বেশি কাছে এলে বড় মায়া পড়ে যায় বারান্দায় বিকেলের ফিকে আলো এলোমেলো পায়ে ছায়াদের মত ফিসফিস করে কত কিছু বলে বাতাসের অক্ষরে চিঠি কানে কানে কত কানাকানি সন্তান সংসার রমণী নিত্যনৈমিত্যিক এইসবকিছু দেবতার চন্দন স্নেহে গোগ্রাসে পান করি আমি গোধুলীকে চেটে পুটে আহ্লাদী বেড়ালের মত পায়ে পায়ে ঘুরি মুঠো করে রেখে দিই যেন হারিয়ে না যায় এইসব বড় আদরের – তুমি আরো বেশি তাই বরং খানিকটা দূরেই থেকো বেশি কাছে এলে বড় মায়া পড়ে যায় ডালাস 

জন্মদাগ ১৪

সমস্ত আদর শেষ হবে একদিন - সব আলিঙ্গন শেষ হবে মুঠোভর্তি অসহায় বাতাসের ক্লান্ত পিছুটান গোধূলি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে আলপথে শরীরের ছায়া - চেনা আজানের সূর উড়ে যাবে ভিনদেশি পাখিদের মত উড়ে যাবে এলানো আঁচলে বেঁধে রাখা লক্ষী পাঁচালি ধূসর মাঠের শেষে পীরবাবা পুকুরে ঝাঁপ দেওয়া বেহুলার ভেলা ভেসে যাবে যেমন সে যায় সমস্ত আহ্লাদ ফেলে রেখে একলা চলে যাবে সমস্ত আদর শেষ হবে একদিন - সব আলিঙ্গন বাসি হওয়া সিঁদুরের দিব্যি - থেকে যাবে এক জন্মদাগ কে তার হিসেবে রাখে ? কেউ রাখে ? ডালাস 

জন্মদাগ ১৫

বাজ পড়েছিল বুড়ো গাছটায় বহুদিন আগে বাবুই বুনেছে বাসা তার বুকে পরম আদরে একটু একটু করে - এর ওর এঁটো কাটা কুড়িয়ে বাড়িয়ে জানলায় দিয়েছে ছিটকানি - দরজায় খিল চোর আর ভোট থেকে রেখেছে বাঁচিয়ে তারপর নতুন বছরের সুখে পাখিরা দল বেঁধে উড়ে যায় - এর ওর সাথে কথা বলে -৫ দোল খায় বাতাসের ঝুলন্ত ডালে মাঝে মাঝে অন্য কোনো গাছ ঘুরে আসে সেখানে সবুজ আরো বেশি - হাওয়া আর উত্তাপও বেশি মনে হয় দলছুট দুয়েকটি চলে যায় প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে কিন্তু তারপর শীত পড়ে গেলে - স্বপ্নের তাপ কমে আসে পাখিদের শীত করে - এক এক করে সক্কলে ফিরে আসে ঘরে বাজ পড়া গাছটির বুকে বাবুই বাসাতে বাজ পড়েছিল গাছটিতে বহুদিন আগে বাবুই বুনেছে বাসা তার বুকে পরম আদরে ডালাস 

জন্মদাগ ১৬

এই তো ছুঁলাম হাত ঠিক যেমন চেয়েছিলে স্পর্শ করলাম তোমার চিবুক দুহাতে জড়িয়ে ধরলাম বাতাস ওড়াবো বলে কিনে আনলাম মোমবাতি সুখ নীল পায়রার সারি এই তো ছুঁলাম হাত ঠিক যেমন চেয়েছিলে রূপকথা শব্দেরা ভিড় করে এলো মাঠজুড়ে বৃষ্টি ভেজালো চোখ ভেজালো মধ্যরাত সহজিয়া বিছানায় অতলান্ত রাত্রি গাঢ় আর গভীর সুখে রইল জড়িয়ে এই তো ছুঁলাম হাত ঠিক যেমন চেয়েছিলে সিঁথিতে সিঁদূর আঁকবো বলে তুলিতে রোদ আর দুচোখে গোধূলি সমস্ত শহর জুড়ে সেইদিন অসময় হোলি এই তো ছুঁলাম হাত ঠিক যেমন চেয়েছিলে সমস্ত কপাল জুড়ে সেই থেকে পোড়া জন্মদাগ ডালাস