জন্মদাগ ১৭

পিঠ সোজা করে বসতে বলতেন বাবা মাথা উঁচু করে হাঁটতে রাতে খাবার পরে বজ্রাসন কৈশোর থেকে দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমেছে শহরে এখন টুপটুপ করে তারা জ্বলে উঠবে এবাড়ি ওবাড়ি গলবস্ত্র শঙ্খ বাজলো - কুয়াশা নামলো আজানের সূরে আর কেনা বেচা শেষ করে জীবনের গলিপথে বসত বাগানে ফিরে এলো বাস্তুসাপ - যেমন ছায়ায় ফেরে পাখিদের দল যেমন ছায়ায় ফেরে পাখিদের দল - তেমন ই নিরন্তর আজানের সূর আর শঙ্খধ্বনি মিলে মিশে সান্ধ উৎসব আমাদের ছেঁড়া খোঁড়া জীবনের অতলান্ত টিভি সিরিয়াল চলতেই থাকে শুধু মনে থাকে না পিঠ সোজা করে বসতে বলতেন বাবা মাথা উঁচু করে হাঁটতে রাতে খাবার পরে বজ্রাসন ডালাস 

জন্মদাগ ১৮ 

তুমি আমাকে পলাশ ফুল তুলে দিতে বললে আর আমি বাতাসে উড়িয়ে দিলাম আবির বৈতালিক তখন প্রায় শেষ তুমি আমাকে চুপিচুপি চিঠি লিখতে বললে আর আমি হা পিত্যেশ বসে সন্ধেতারার আশায় রেডিওতে তখন অনুরোধের আসর তুমি ভিড় ট্রেনে আমার হাত চেপে ধরলে আর আমি বৃষ্টির জলে কাগজের নৌকো কর্ড লাইন জুড়ে তখন শুধুই সবুজ সিগন্যাল তুমি মেলার মধ্যে হারিয়ে যেতে যেতে আমায় ডাকলে আর আমি বাউলের ডুপকিতে বাজতে বাজতে পৌঁছে গেলাম ভুবনডাঙার মাঠে আর এতদিন বাদে যখন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালে ফেসবুকে সেই পলাশ, বেগুনি রঙের চিঠি, মেন্ লাইনের কল্যাণী লোকাল আর কালাচাঁদ দরবেশ অঝোরে আমার হাত চেপে ধরল আমি সবকিছু ভাসিয়ে দিলাম কোপাইয়ের জলে ডালাস 

জন্মদাগ ১৯

দুইহাত ভরে নিতে ই শিখেছি শুধু দেবার মতন আমার কি আছে বলো ? পায়ে চলবার পথটি দিয়েছে ঘর জানলা দরজা দুইহাট করে খোলা বাতাস তাহার জন্ম পাহারাদার বৃষ্টির ছাদে হৃদয় পুষ্করিণী শহরের ছাদ পিচগলা আহ্লাদ মেঘ রোদ্দুর তারা চেনবার খেলা পাখিরা এখানে কথা দেয় কথা নেয় আমি বুক ভরি গোপন উচ্চারণে উচ্চারণে জমে নি কখনো ক্লেদ ঠিকানা বদলে বাড়ি হয়ে ওঠে ঘর রমণীর সুখে নিকোনো উঠোন খানি সন্তান সুখ এবং নির্ভরতা নির্ভরতা এখন গায়ের চাদর দরজা বন্ধ জানলা ভেজিয়ে রাখা পাখিরা এখন অন্যশহরে যায় কথা দেয় আর কথা নেয় বিস্বাসে দুইহাত ভরে নিতে ই শিখেছি শুধু দেবার মতন কি আমার আছে বলো ? ডালাস 

জন্মদাগ ২০

এক যত্ন করে আমার মতন করে তোমায় সাজিয়ে নিতে চেয়েছিলাম বাস টিকিটে ম্যাচ বাক্সে সবুজ শাড়ি নীল সালোয়ার আদর করে যত্ন করে ঠিক যেভাবে ছবির কবি বাঁধিয়ে রাখেন পংক্তিগুলো যত্ন করে রেখেছিলাম তোমার সাজে আমায় আমি ভীষণ ভালবেসেছিলাম দুই আর তারপর তোমার দিকে তাকিয়ে আমার বুক কেঁপে ওঠে দুহাতে রুদ্রাক্ষের মালা গেরুয়া আটপৌরে শাড়ি উন্নত যৌবন ডানহাতে ত্রিশূল আর অন্যহাতে সন্তান পালন কিন্তু কপালে কি কাঁচপোকা টিপ্ ? অভ্যস্ত যন্ত্রনা পেরিয়ে পায়ে পায়ে সন্ধ্যা তার মধ্যে একফোঁটা চলকানো হাঁসি সেই আয়নায় বাইশ বছর আগেকার রমণীর মুখ ভেসে ওঠে অসাবধানে ডালাস 

জন্মদাগ ২১

দিক আসলে একটাই - শুধু দেখার ভূলে - ভুল ঠিকানা কিন্তু আমার পথ চিনতে ভুল হয় না তাকিয়ে দেখুন আমার দিকে - ঠিক আপনার কিংবা ওনার মতন দেখতে বাজার থলি - ধুপ ধুনো আর চন্দন ফুল পুজোর থালি সাজিয়ে নিয়ে জীবন তরীর হাল ধরেছি ঝড়ে আমার বুক ঢিবঢিব - হাত থরোথর তবুও আমার পাখির লক্ষে চোখ সরে না তবুও আমার পথ চিনতে ভুল হয় না দল আসলে একটাই - তাতে রক্তমাংস কান্না হাসি সোহাগ সকাল - স্বপ্নকথন - একই রকম বাজার থলি ধুপ ধুনো আর চন্দন ফুল পুজোর খালি যে যতটাই গুলিয়ে দিক না রক্তের রঙ কালচে লাল আর অশ্রু এখনো রঙহীন এক স্তব্ধ আকাশ আমার তাদের চিনতে কিন্তু ভুল হয় না আমার তাদের জড়িয়ে ধরতে ভুল হয় না এই সময়েও আমার কিন্তু ভালোবাসতে - একমুহূর্ত বুক কাঁপে না দিক আসলে একটাই আর সেই দিকে যায় দুচোখ আমার বাকি সমস্ত দেখার ভুল - ভূল ঠিকানা ডালাস 

জন্মদাগ – ২২

ভুলে যেতে চাইলেই যখন খুশি সব ভুলে যাওয়া যায় যেমন ইচ্ছে করে রাস্তা ভুল করে খালের ওই পাড়ে - বেপাড়ায় আধঁফোটা চাঁদ হয়ে জমে আছে কৈশোর - সরকারি আবাসন - অবেলায় ছুতো করে তোর বাড়ি - সেখানেই ঘরবাড়ি শিকড় গজিয়ে বুনো গন্ধ মাটির দাগ লক্ষীমন্ত মাছের কানকো বৃষ্টি নামল জোরে - পায়ে পায়ে বন্দর পেরিয়ে দ্রুতগামী লোকাল ট্রেনের মত অন্ধকার লেপ্টে থাকে গায়ে - হাতে - পায়ে ছুটে চলে স্টেশনের দিকে - দিকভ্রান্তের মত একদম সটান সেই নরকের দিকে বৃষ্টি ধরে এল - যেমন ধরে আসে যৌবন দুর্বাসার অভিশাপের তেজ একমুঠো সময়ের মত আলগা হয়ে যায় - উড়ে চলে যায় পুরোন আয়নার মত ফেলাও যায় না তাকে রাখাও যায় না ! গভীর রাত্রে বৃষ্টি থেমে গেলে কুয়াশার মত সন্তানের মুখ যেন একা একা জোনাকির আলো পথভুল করে বার বার মাথার কাছে বসে থাকে .. ভুলে যেতে চাইলেই যখন খুশি সব ভুলে যাওয়া যায় ? ডালাস 

জন্মদাগ ২৩

দিলে সবটুকু দিও, সরিয়ে রেখো না কোনোকিছু শেষ বিন্দুটুকু ঢেলে দিয়ে নিশ্চিন্তে আচমন কোরো পোড়ো গাছটিকে দেখো - দুইহাতে বিলিয়েছে সবকিছু সঞ্জীবনী ফল, ফুল পাতা - বার বার সাজিয়েছে - নতুন বছরের হালখাতা অপাত্রে করেছে দান - প্রতিদান - কিছুই পায় নি শুধু পাখিদের গান আর অযাচিত যন্ত্রনা ছাড়া আর নদীটিকে দেখো আজন্ম কাল ধরে ভাসিয়েছে ভেলা যেদিকে তুলেছো পাল সেই দিকে বয়ে গেছে যেখানে নিয়ে গেছো যে পাত্রে দিয়েছো স্থান প্রশ্ন করেনি শুধু ছুঁয়ে আছে ওদের মতোই - দিলে সবটুকু দিও, সরিয়ে রেখোনা কোনো কিছু শেষ বিন্দুটুকু ঢেলে দিয়ে নিশ্চিন্তে আচমন কোরো ডালাস 

জন্মদাগ ২৪

দুহাত পেতে বসে আছি যেমন ছিলাম শৈশবকাল থেকে যেমন ছিলাম শহর উঠোনটিতে ইষ্টিকুটুম বৃষ্টি জলে নৌকো ভাসান দিতে যেমন ছিলাম ট্রামলাইনের ধারে শুকিয়ে যাওয়া কৃষ্ণচূড়া - রাধাচূড়ার একলা হওয়ার ভারে যেমন ছিলাম সবার মধ্যে একলা বহমান গঙ্গা হাওয়ায় সেই দুপুরে ভাসিয়ে ছিলাম আমার নাড়ির টান ফিরে আসে নি কিছুই - ফিরে আসে না - এই কথাটা বুঝিয়ে দিয়ে যায় বাজু বন্ধে জলের দাগ খোদাই হলে মধ্যরাতের স্বপ্ন নিভে যায় ডালাস 

জন্মদাগ ২৫

তুমি জানতে না হৃদয়মূল্য কত কত আধুলিতে বেচা কেনা হয় সুখ কোন দরবারে স্বপ্নের দাম কত কোন মুখোশের পেছনে কি মুখ আছে তুমি জানতে না কেন মল্লার কাঁদে মেঘে মেঘে কেন বয়ে গেল তার বেলা বৃষ্টির জল কেন পায়ে পায়ে ঘোরে কাগজ ভেলা ভেসে গেল কোন গ্রামে তুমি জানতে না গোধূলির স্রোত শেষ হয়ে গেলে তাতে বিদ্রুপ লেখা থাকে যাকে চিনেছিলে তারাদের বিস্বাসে তোমার অশ্রু আজ তার বাসি লাগে যা যা জানতে না আজ তুমি সব জানো তবু তুমি আজও প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখো ? ধুপ ধুনো দাও দশকের অভ্যেসে - নাকি ঢেকে রাখো মুখ বিষাদ বাঁধানো ফ্রেমে ? ডালাস 

জন্মদাগ ২৬ 

সূর্য চায়নি একফোঁটা রোদ ফিরে পাখিরা শুধুই বিলিয়েছে কুঞ্জন রাজপথ তার বুক পেতে শুয়ে আছে মাতৃআদরে ঘুমিয়েছে সন্তান বৃক্ষ চায়নি ছায়ার মূল্য কিছু বাতাস খোঁজেনি স্পর্শের উত্তর বৃষ্টি নেমেছে কপালে চিবুকে ঠোঁটে ছোট নদীখনি ভেঙেছিল দুই পাড় ভেঙে দেওয়াটাই অভ্যেস ছিল তোর যখন যা চাই নিয়ে নেওয়া সবটুকু সবটুকু মানে সমস্তকিছুই চাই যা যা তোর আর যা যা তোর নয় কোনদিনও সূর্য বৃক্ষ বাতাস বৃষ্টি আর শিশুটির হাঁসি নারীর অশ্রুজল আদরের ভাগটিও ডালাস