আমাকে দাও

তোমার অন্ধকার আমায় দাও আমি তাতে গাঢ় রং আলপনা দেব সিঁথিতে পরিয়ে দেব রক্তকরবী মালা কপালে যুদ্ধের টিকা তোমার নিরবতা আমায় দাও আমি তাকে দুমড়ে মুচড়ে ফেলে ভরে দেবো সূরহীন স্বরে অতলান্ত প্রয়োজন কাজের শীৎকারে তোমার অপমান আমায় দাও আমি তাকে সাজিয়ে দেবো প্রাত্যহিক গ্লানির সম্ভারে তোমার অসহায় হাত দুটি আমায় দাও আমি তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে যাবো দায়হীন সূর্যাস্তের দেশে আর তারপরও যদি কিছু বাকি থাকে তোমার সমস্ত কান্না আমায় দাও আমি তাকে বুক ভরে নেবো আমার দুচোখের জলে

জন্মদাগ ১০৪ 

একসময় একটি দলে ছিলাম গলা মেলাতাম চেনা শোনা সূরে এবং বেসূরে মিছিলে হাঁটতাম আহ্লাদে রাজপথ জুড়ে সেসময় হোলি খেলা হত আদরে ভেসে যেত প্রতিটি সূর্যাস্ত তারপর একদিন দলছুট হয়ে একা একা প্রান্ত প্রদেশে গিয়ে অন্য আরেক দলের সঙ্গে দেখা হল তারা দাওয়ায় বসতে দিলো হাতপাখা - শিতলপাটি - কুশল সংবাদ চোখে মুখে জলের ঝাপটা এরপর অনেক দলের সঙ্গেই আমার দেখা হয়েছে আঙুলে জড়িয়েছে আঙুল নিঃশ্বাসের সঙ্গে মিসেছে অন্য নিঃশ্বাস আহ্লাদের নানা রং এঁকেছে আদরের কতো কতো ছবি একসময় একটি দলে ছিলাম এখন অনেকের আদরের সঙ্গে থাকি পরম আহ্লাদে

জন্মদাগ ১০৩ 

আসলে বলবার মতন কথা বড় কম বরং বাতাসের নরম চুলে মাথা রাখো উড়িয়ে দাও দীর্ঘশ্বাস জনে জনে ডেকে বলে দাও গোপন সংকেত ঝগড়া করো পায়ে পা বেঁধে তার পর ঘরে ডেকে চা বিস্কুট কুশল সংবাদ আর সন্ধে হলে নদীর আঁচলটিতে বেঁধে রেখো যা কিছু জমিয়েছো এতোদিন তার পর ভাসিয়ে দাও রাত্রির গভীর বিশ্রামে আসলে বলবার মতন কথা বড় কম বরং কান্নার বুকে মাথা রেখো রাত্রির তৃতীয় প্রহরে ডালাস

জন্মদাগ ১০২ 

তিনি বহুরূপী তাই আমি তাঁর কাছ থেকে রূপটান শিখি বাধ্য ছাত্রের মত কিভাবে তিলকে তাল কিম্বা কিভাবে তিলক কাটতে হয় কিভাবে সাজাতে হয় নৈবেদ্যর থালা কোন ফুল কোন পূজোয় কতটা চন্দন কতটা চন্দন দিয়ে আঁকা যায় কতখানি ভুরু এবং কার কোন অধিকার অন্দরের ঠিক কোন গোপন মহলে কতটা বন্ধ করে রাখতে হয় চোখ রাত্রির ঠিক কোন প্রহরের ইঙ্গিত পেলে ঠিক কোন ইঙ্গিতে তাঁর সম্ভোগ সম্পূর্ণ হয় তিনি বহুরূপী তাই আমি তাঁর কাছ থেকে রূপটান শিখি ডালাস

জন্মদাগ - ১০০

যেভাবে চলে যেতে হয় সেভাবেই যেও ফিরে আসবার কথা দিয়ে কিম্বা না দিয়ে উৎসুক দৃষ্টিকে উপেক্ষা কিম্বা অবজ্ঞা করে মধ্যরাতে কানে কানে দেওয়া কথা একদম ভূলে গিয়ে - কিম্বা ভোলার ভান করে চলে যেও এভাবেই তো চলে যেতে হয় আসলে পেছনে তাকালেই বড় মায়া পড়ে যায় উনকোটি পায়ের ছাপ আলোতে অন্ধকারে মাখামাখি ঘামের আঘ্রাণ একরাশ খোলা চুলে জড়িয়ে রাখা দস্তাবেজ সবুজ কালিতে লেখা চিঠি আসলে পেছনে তাকালেই বড় মায়া পড়ে যায় তাই যেভাবে চলে যেতে হয় সেভাবেই যেও পেছনে তাকিও না ডালাস

জন্মদাগ ১০১ 

দেওয়াল জুড়ে আঁকা রয়েছে আমার শৈশব ঘুণ ধরেছে, তবুও সেতো আমারই এই সব সেসব কি আর হারিয়ে ফেলার - সেসব হেলাফেলার ? সেসব কি আর ইচ্ছে মতন বদলাবদলি খেলার ? এখন সূর্য পাটে বসবেন পশ্চিমে তাঁর ক্লান্ত যাতায়াত এখন সূর্য বাড়ি ফিরবেন স্টেশন রোডে আটকে থাকে চাঁদ এখন তাঁর রাজ্যাভিষেক তার জন্য বাণপ্রস্থের ঘোড়া এখন সন্ধা মধ্যবয়েস নিশ্চয়তার একাকীত্বে হাস্নুহানা খেলা তার মধ্যে খুঁজছি তোমায় - খোঁজাখুঁজিই সার বাজুবন্ধে যত্ন করে এলান সংসার দুহাত ভরে ফুল এনেছি দুহাত ভরে মালা তিন শালিখের দিব্যি দিলাম জলছবি বইমেলা হাপিত্যেস এসব নিয়েই এরাই আমার সব ঘূণ ধরা ঐ দেওয়াল জুড়ে একলাটি শৈশব ডালাস

২১ শে ফেব্রুয়ারী - ২০২৪

যার কাছে কথা বলতে শিখেছিলাম তিনি এখন হাসপাতালে শিরদাঁড়ায় টান ধরেছে উঠে দাঁড়ান বড় মুশকিল তাঁর দিকে তাকাতে ভয় করে বরং আমি অন্য ভাবে কথা বলতে শিখে গিয়েছি যেভাবে ফেসবুক কথা বলে কিম্বা গ্লোবালাইজ ভারতবর্ষ আমি সেই ভাষ্য আয়ত্ত করেছি মন দিয়ে তাই - যার কাছে কথা বলতে শিখেছিলাম যিনি এখন হাসপাতালে আমার কথা বুঝতে তাঁর বড় অসুবিধা হয় আর আমি " মহান একুশের আত্মকথা" লিখে ফেসবুকে পোস্ট করলাম এখন লাইকের হিসেব গুনছি যার কাছে কথা বলতে শিখেছিলাম যিনি এখন হাসপাতালে তাঁর শিরদাঁড়ায় টান ধরেছে উঠে দাঁড়ান বড় মুশকিল ২১ শে ফেব্রুয়ারী ২০২৪ রাহুল গুহ ডালাস ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ডালাস 

অভ্যাস

১। এভাবে সন্ধ্যা নামে শহরের ক্লান্ত কপালে আমরা এদিক ওদিক ছড়িয়ে যেতে যেতে নেহাত অভ্যাসে মুঠো বন্ধ করে ফেলি - ভাবি - এই তো বন্দী করেছি তোকে - আর ঠিক সেই সময় আদেখলা ছেলেটার মত ঘুড়ির পেছনে দৌড়ে চলে যায় একরাস পশ্চিমী হাওয়া এভাবেই আমার শহরের আঁচল এলোমেলো হয়ে কোথায় কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে আর আমি অভ্যাসে বার বার বাড়ি ফিরে আসি ২। তারপর আমি বাড়ি ফিরে এসে দুয়ার বন্ধ করে আরাম কেদারায় আধশোয়া হয়ে বসে গুনগুন করে গান গাই নিজেই শুনি কেননা অন্য সকলেই নিজের গুহায় একা একা বসে নিজের গাওয়া গান নিজেই শুনতে ব্যাস্ত মার্চ ২০২৪ ডালাস 

জন্মদাগ ৪২০

সত্য বলতে পারি না তাই আড়ালে আবডালে মধ্যরাতে কবিতার তাঁবেদারি করি শব্দের তুলিতে আঁকি বাংলার ফেলে আসা অনাবিল মুখ শূণ্য গেলাসের মতো রাজপথে ফেলে দিই ভাঙা অঙ্গীকার আর - পড়ে থাকে দুচোখ কালো করে জমে থাকা একরাশ অসহায় মেঘে ঢাকা তারা - তার দিকে তাকাতে ভয় করে তখন অঙ্ক কষি কতো ধানে ঠিক কত মণ "মন" কেনা যায় সত্য বলতে পারি না তাই আড়ালে আবডালে মধ্যরাতে কবিতার তাঁবেদারি করি ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ডালাস 

প্রতিবিম্ব

ঠিক যা যা শোনবার কথা - তাঁদের চোখ বুজে বিস্বাস করবার আগে প্রশ্ন করো - টিপে টুপে কানকো তুলে রক্তের রং দেখো যেমন দেখে শুনে বাজার করো ঠিক সেইভাবে কেননা একবার কেনা হয়ে গেলে দায় কিন্তু তোমারই বর্তাবে রং বেরং এর পেটকাটি ঘুড়ি আকাশে উড়ছে তাঁদের মাটিতে নামানোর দায় তোমার নয় কেননা মাটিতে নেমে এসে তাঁদের সমস্ত রং বদলে যাবে - যাবেই বরং ভাল করে আয়নার দিকে তাকাও কিম্বা চলমান নদীর দিকে কিম্বা সন্ধের কুয়াশার দিকে যেখানে নিজের প্রতিবিম্ব আবছা হলেও ঠাওর করা যায় বাজারের সবজি, চাঁদিয়াল ঘুড়ি কিম্বা একলক্ষ বত্রিস বার শোনা কথার চেয়ে নিজের আবছা অবয়ব অনেক সূন্দর বরং তাকে রং করো দেখবে ফুলের মতন তুমিও এক বাগান হয়েছো ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ডালাস