ঠিকানা

রাস্তা যেখানে পৌঁছয় সেটাই আমার ঠিকানা ঠিকানা লেখা হয় পরিচয় পত্রে শরীরে, উন্নাসিকতায়, বিপন্নতায় এবং মাথার চুলে সেখানে অনেকের সঙ্গে দেখা হয় কথাবার্তা - একত্র উল্লাশ - অলশ সন্ধ্যায় জমে ওঠে চেনা বৈতালিক - তারপর একদিন হাওয়া ওঠে জোর উল্টে পাল্টে দেয় উঠোনের চেনা বৈভব অগত্যা রাস্তা বদলে গিয়ে শুরু হয় নতুন নির্মান রাস্তা যেখানে পৌঁছয় সেটাই আমার ঠিকানা আমি তাকে পাশপোর্টে লিখে রাখি যাতে সে হারিয়ে না যায়

কবি

এই শহরে তিনি থাকেন বড় রাস্তা ছাড়িয়ে গলিঘুঁজি পেরিয়ে জীর্ন চারতলা সরকারি আবাসনে বাতাসের গায়ে গা লাগিয়ে - তিনি থাকেন সকালের কাগজ আসে - চা জলখাবার বাজারে উঠতি পোনামাছ - কচুর লতি হাতে হাতে বদল হয় স্বপ্বের রং আকাশের ক্যানভাসে তিনি ছবি আঁকেন লিখে রাখেন প্রগাঢ় ঔদ্ধত্ব আর আনত ভালবাসা একান্তে উচ্চারণ করেন শৈশবের কীর্তন গান নিজের সঙ্গে জমে ওঠে দারুন আসর তারপর রাত বাড়লে ঘুমিয়ে পড়ে গৃহস্থালি বাতাসে ছড়িয়ে যায় নিঃশাস পেজ থ্রি জুড়ে ফিরি হয় একশ আট নীল পদ্ম তবু সূর্য উঠলে তিনি উঠে বসেন বাতাসের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন গাছে জল দেন - যে আসে তাকে জড়িয়ে ধরে অন্য আশ্চর্য সময়ের গল্প শোনান

নিমগাছ

বাবা ছোটবেলায় আমাকে নিমগাছ চিনিয়েছিলেন -সেই ছায়াতে বসতে শিখিয়েছিলেন - বলেছিলেন নিমগাছের ছায়া মানুষের জন্য খুব ভাল সেই নিমগাছটি আমার উঠোনের একপাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে তার বিকেলের ছায়ায় আজকের দিন সময়কে তুলে দেয় কালকের হাতে - আর তখনই উত্তুরে হাওয়া হৈ হৈ করে এসে পড়ে আর শুরু হয়ে যায় হুল্লোড় নাচ গান আর মহা উৎসব আবার কোনো কোনো দিন ক্লান্ত সন্ধ্যেবেলা নিমগাছের গা বেয়ে আমাদের উঠোনে কুয়াশা নেমে আসে - একফালি আলো - চেনা আঁচলের স্বাদ - তামাকের গন্ধ - কেউ কেউ আসেন - আগুন পোহান - তারপর বাড়ি ফিরে যান ...

নামগান

তিনি বলে দিয়েছেন কত ধানে ঠিক কত চাল হয় আর কিভাবে ভোরবেলা উঠে কতক্ষন যোগব্যায়াম এবং কোনবেলা কোন রং শাড়ি কতটা পাড় আর ব্লাউজের হাত ঠিক কত ইঞ্চি ছোট কিংবা বড় তিনি বলে দিয়েছেন কি কি বই পড়লে আমাদের মন ভাল হবে এলোমেলো দুর্ভাবনা মুছে শরীর টলোমলো আশ্চর্য সুখ পাট করে আঁচড়ানো দৃষ্টিতে আর পড়বে না অবান্তর ফুটপাথ - রাধাচূড়া গাছ তিনি বলে দিয়েছেন তাই - শেষ রাতে সূর্য এসে জিজ্ঞেস করে গেছে আজ কোন দিকে উঠবার পালা আর গঙ্গার দ্বিপ্রহরী বান কখন আসলে সমাজ শাস্ত্র আর সভ্যতা - মধ্যমার মত স্থির থাকে তিনি বলে দিয়েছেন প্রায় সমস্ত কিছু মানুষের যা কিছু লাগে আর লাগতে পারে আর বদলে তাঁর কোন পায়ে কোন নৈবেদ্য ঠিক মুশকিল শুধু দুটো চড়ুইকে নিয়ে . কথা শুনতে শেখেনি সমস্ত দিন শুধু বকবক আর বেলেল্লা একফালি চাঁদ সমস্ত রাত ধরে স্বপ্নের বেসাতি খুলে জানলার পাশে এক বসে আছে ডালাস 

রাজেন্দ্রানী

এই রাজপথে এটাই মানায় অন্যকিছু বড় ফিকে লাগে কচি কলাপাতা সালোয়ার উঁচু করে বেঁধে রাখা গ্রীবা সন্ধ্যার নাছোড় আবদার হাতে হাতে ক্লিশে ইস্তেহার ফুটপাথে তখন শঙ্খ বেজে ওঠে উলু দেয় লোকে বৃদ্ধ আশীর্বাদ করলেন দূর থেকে ছুটে এলো হরিণ শাবক বাজুবন্ধে ফুটলো জুঁই ফুল দুচোখে তখন জলের দাগ মুঠোভর্তি জেদ কচি কলাপাতা সালোয়ার বনগাঁ লোকাল ধরে বাড়ি ফেরে এই রাজপথে এটাই মানায় অন্যকিছু বড় ফিকে লাগে আমি শুধু তার উজ্জ্বল হেঁটে যাওয়া দেখি ডালাস 

সন্তানসুখ

কুয়াশা থাক অন্য কোনো দেশে অন্য কোথাও অন্য দেশে যাক হাওয়ার স্রোতে ভাসুক প্রদীপকনা শহরের নাম বদলে গেলে যাক সেই শহরে নতুন ঘরবাড়ি নতুন বাতাস নতুন দীর্ঘশ্বাস পায়ের তলায় লাগামছাড়া মাটি হাতের মধ্যে জাপ্টে ধরা হাত হাতের রং হলুদ শাদা কালো কি যায় আসে কাঁদার ভাষা কি ঝাপসা কাঁচ আর সিক্ত সন্ধেবেলা তোর আর আমার বৃষ্টি মাস বারো যেখানে তুই সেখানে আমি থাকি তোর জন্য জমানো বাসটিকিট কিশোর কাল তোর জন্য শুধু বাক্স করে তোরঙ্গেতে রাখি বাক্সের রং হলুদ শাদা কালো তুই যদি চাস তোর জন্য শুধু সর্ষে রঙের বৃষ্টি মাখা আলো ডালাস 

অসুখ

সুখ ছিল না অনেকদিন হল এবার অসুখও হল তার বাধ্য হয়ে জানলা দরজা খুলে মেঘ দেখতে শিখলো আর এক বার নতুন করে হাঁটতে শিখতে হল প্রথম ভাগ বর্ণপরিচয় অনেকদিন পর, রোদ উঠল সারা আকাশ জুড়ে - নরম ভেজা ধানদুব্য মেঘ খেলে বেড়ালো সমস্তটা দিন এই জানলায় ওই জানলায় এই শহরে ওই শহরে এই মন থেকে অন্য মনে - অনেকদিন পর, ক্লান্তিহীন নৈঃশব্দ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল পরেরদিন বৃষ্টি হল ঢেলে - জল জমল শহরতলীর রাস্তাঘাটে খুব তোমার দেশের ময়ূরপঙ্খী ডিঙা এসে ভিড়ল আমার বন্দরে তুমি এলে আমার আঙিনাতে আসতে যেমন বছর পঁচিশ আগে নিরাভরণ আহির ভৈরবে সুখ ছিল না অনেকদিন হল এবার অসুখ ও হল তার নতুন করে হাঁটতে শিখতে হল প্রথম ভাগ বর্ণপরিচয় ডালাস 

এন  আর আই 

ভেবে দেখলাম দূরে থাকাটাই ভাল হে পায়ে লাগে না পা - কাটে না পচা শামুক এই পাত্রে ঠোক্কর খেয়ে বেসুরে বাজে না আরেক হরেক রঙের সময় পুরোনো গলির মোড়ে - বৃষ্টিতে ভিজে কাটা ঘুড়ি লাট খেয়ে ফেসবুকে পঞ্চান্ন লাইক কড়াপাক ঘামে ভেজা যৌবন মেট্রো আর উবের স্রোতে চালাও পানসি সত্য আমি জানি কিন্তু বলতে গিয়ে বাধে বরং তারচেয়ে এই ভাল বচ্ছর ঘুরলে কস্টকোর সেল সান্তাক্লস বারোর দুই বাই চব্বিশ মোহনবাগান লেনে "চোখটা দেখান দরকার - ডেন্চারের খরচ অনেক" নন্দন নলবন আর্সলান আর মিঠে রবিকাকা আর হিসাবি এগরোল সহ "কেন যে কিছুই হল না এ পোড়া দেশের " পঞ্চ ব্যঞ্জনে বেড়ে ওঠা শহরের লালুভুলু আমি দূরে দূরে থাকি আড়ালে আবডালে যেখানে পায়ে লাগে না পা - কাটে না পচা শামুক ডালাস 

লাস্ট ট্রেন

যে মেয়েটা এক্ষুনি রাগ করে চলে গেল সন্ধ্যার মেন্ লাইনের ভিজে হাওয়া ওকে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখিয়েছিল আর সেসময় ধানরঙা বিকেলের স্টেশন রোডে খনখনে একচালা পলাশ সঙ্গীত সেই পুরু ঠোঁটে চেনাশোনা - পথচলা সুখ শিখেছিল তারপর একদিন গাছের গুঁড়িতে জড়িয়ে ওঠা লতানো বিকেল সালোয়ার ভাঁজে ভাঁজে জোনাকির দাগে কলাতলা আমপাতা ঝামুর ঝুমুর আর আমি যখন দুহাতে গোধূলি একটা শিখলাম কুয়াশার চাঁদোয়ায় তৈরী করলাম পর্ন কুটির বহুদূর থেকে দৌড়োতে দৌড়োতে প্রান্ত স্টেশনে ... তখন সন্ধ্যের আড্ডা চায়ের দোকান ধোঁয়া ওঠা ভাতের গন্ধ আর তারপর নিবিড় রাত্রি যাপনের মত লাস্ট ট্রেন ছেড়ে চলে গেছে খুব দেরি হয়ে গেছে ডালাস 

জলের নাম

জলের নাম তিতাস ছিল তার বালুতে ছিল পূর্ণিমা রং আঁকা এইপাড়টি স্টেশন রোডের ধারে অন্যদিকে ইষ্টিকুটুম ছড়া মুখ খানিতে বিকেল লেগে ছিল চন্দ্রালোকে নিশির ডাকের মত তার ধমনীর প্রতিটি তন্ত্রীতে সুর বেসুরো নাছোড় ভৈরবী তুলসী প্রদীপ শঙ্খধ্বনি গানে পাড়ার মোড়ে সন্ধ্যা নেমে এলো সন্ধ্যা হলে সবুজ বাতাস বয় রাধাচূড়ায় শালিখ এসে বসে একটি নিমেষ লগ্নভ্রস্ট হল কালের স্রোতে অবগাহনের টানে সেই মুহূর্ত হিসেবে বোঝে নি কিছুর ভেসে গিয়েছিল সুখের সরণি বেয়ে যে বোঝে সে অমনি বোঝে সবই পূর্ণিমাতে জলের দাগ লাগে জলের নাম তিতাস ছিল তার বালুতে ছিল পূর্ণিমা রং আঁকা ডালাস