যাত্রা

যার যাবার সে চলে যাবেই সেটাই তাহার পথ গ্রামের নামটি কুসুম কানন নদীর বুকে সর - পড়েছে তাই চাতক এসে বসে দুচোখ ভরে জলের ভারে অতলান্ত মুহূর্তটির জেগে থাকে - একলা হয়ে থাকে ধরে রাখতে যেও না তাকে ফুলের ভারে - ছবির দাগে উড়িয়ে দিও হাওয়ার সাথে যেমন ওড়ে পাখী ভাসিয়ে দিও বৃষ্টিজলে একলাটি বানভাসি যে যায় সে একলা যায় একলা করে যায় যে যায় সে একলাই যায় একলা করে যায় ডালাস 

আগুন

আগুনের কোনো দেশ হয় না সে শুধু পোড়াতেই জানে পুড়ে গেলে মানুষ - মানুষ থাকে না . মৃতদেহ - "বডি" হয়ে যায় গায়ে সাড় - মুখে ভাষা থাকে না কন্ঠী কিংবা ফেজটুপি মন ও থাকে না তার লজ্জায় হারিয়ে যায় জাত ধর্ম - বাসি রক্তের দাগ যে আগুন জ্বালে আর যে তাতে পোড়ে দুজনের নাভিমূল একসাথে মিশে যায় গঙ্গায় - মৃত্তিকার প্রাচীন আঁধারে আগুনের কোনো ধর্ম হয় না পোড়া দেহ আর নাভীমূলের ও নয় কান্নারও নয় ডালাস 

একুশ

একুশ মানেই জ্যান্ত সময় রক্ত ফোঁটা ফোঁটা একুশ মানেই শিশুর মুখে প্রথম কথা ফোটা একুশ মানেই পাখির পালক প্রভাত ফেরীর গান একুশ মানেই দৃপ্ত পায়ে মুছবো অপমান একুশ মানেই ভোরের আকাশ আটপৌরে দিন একুশ মানেই তোমার চোখে আমার জন্মদিন একুশ মানেই পানকৌড়ি নাম না জানা পাখি একুশ মানেই যাত্রা সুরু সূর্যপথে সাথী একুশ মানেই ধুলোর মধ্যে কুড়িয়ে পাওয়া বই সেই ছেলেটার ভেলভেলেটার নতুন বন্ধু হই একুশ মানেই বদলে যাওয়া পথচলতি দিন একুশ মানেই অক্ষৌহিনী সুরের জন্মদিন একুশ আমার ব্যাক্তিগত একুশ আমার ভাই তার কপালে হাত বুলিয়ে মন্ত্র এঁকে যাই একুশ আমার জল সই বোন চোখের কোনে কালি বিষের পাহাড় পেরিয়ে এসে তারার করতালি একুশ মানেই তোমার জন্য মধ্যরাতে পথে নগর বাউল আঁকছে দ্যাখো নিজশ্ব এক ছাঁদে একুশ আমার সত্যি কথা মায়ের মতন সাদা যত দূরেই যাই না তবু নাড়ির টানে বাঁধা একুশ আমার নদীর ভাঙন শাহবাগের ঋণ একুশ মানেই মায়ের আঁচল আমার জন্মদিন ক্যালিফোর্নিয়া

কাগজ 

ফুটবল খেলার সময় কারুর মনে পড়ে নি ক্রিকেট খেলার সময়ও না পাড়ার মাঠে নয় বিদেশে দাদাগিরিতে নয় পাড়ার নাটকে আর লুকিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়ে ধরা পড়ে গিয়ে কিংবা সমস্ত রাত ধরে স্বপ্নের রামধনু জ্বালিয়ে কলকাতা চমকানো জীবনমুখী সুর তৈরী করবার সময়ও নয় শহরের আনাচে কানাচে ছেঁড়া সুতোর মত রোদ বৃষ্টি আর মুঠোভর্তি হাওয়া আর মিষ্টি আলপনার গন্ধ মেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ব্রিগেড ভরানোর সময় ও নয় এমনকি কার্গিল যুদ্ধের সময়ও নয় কারোর কোনোদিন মনেই পড়ে নি যে বারোর দুই বনমালী নস্কর লেনের ছেলেটা মুসলমান আজ থেকে প্রতিমা বিসর্জনের পরে গঙ্গাস্নান কিংবা দশটা ছয়ের বারুইপুর লোকালে ওঠবার আগে কলেজে সদ্যযৌবনা মেয়েটির দিকে তাকাবার আগে ওকে কাগজ দেখাতে হবে ডালাস 

দেশভাগ দিবস - ২০১৯ 

আমাকে তুমি অনেক দিয়েছো জন্মের শোধ নিয়ে দেগে দিয়েছো লক্ষ মানুষের ভিটে মাটি এক ধাক্কায় ছিন্ন হয়েছে মূল হারিয়েছে পরিজন - লজ্জায় বন্ধ্যা হয়েছে ভূমি সসাগরা দশক ধরে উপুড় করেছো গ্লানি শিখিয়েছো অপমানবোধ একটু একটু করে সেচন করেছো বিষ গলিপথে প্রসব করেছ এক লক্ষ শহীদের বেদি আমাকে তুমি অনেক দিয়েছো তাই আমি তোমায় দিলাম মুঠোভর্তি স্বপ্ন অদম্য জেদ আর দুটি চারা গাছে স্বযত্নে লালিত বুনোফুল

একসঙ্গে - ১

একা চলা তো অনেক হল এবার এসো এক সঙ্গে থাকি ওই পাখিদের দেখো - তারাদের এমনকি একা একা বেঁচে থাকা গাছটির পাতা এর ওর হাত ধরে আছে - আহ্লাদে - পরম যত্নে এমনকি ঝরে পড়বার পরও ছুঁয়ে আছে যতক্ষন পারে আসলে ছুঁয়ে থাকতেও শিখতে হয় প্রকৃতি এবং পূর্বপুরুষের কাছ থেকে গণ্ডুষ করে পান করতে হয় অনুভব নৈমিত্তিক পুজোপাঠ আচরণবিধি নিশাচর অভিসার এবং সম্ভোগ সেচন করতে হয় প্রশ্রয় - কপট আবেগ দেখেও ফিরিয়ে নিতে হয় চোখ না দেখার ভান করে বেড়া দিতে হয় যাতে ভিনদেশি বাতাস না লাগে একা চলা তো অনেক হল এবার এসো এক সঙ্গে থাকি ডালাস 

কোমল গান্ধার

এ শহরে আবার জন্ম নিক ক্রোধ গলে যাওয়া পিচ আর ধোঁয়ার গন্ধ বুকে নিয়ে বাতাসকে তালুবন্দি করে শিশুটিকে আগলে রাখুক সেই উদ্ধত চোখ এ শহরে আবার জন্ম নিক ছিন্নমূল শোক চুল্লিতে পুড়ছে যে সময়ের জন্মইতিহাস তার ধোঁয়া কলোনির মোড়ে মোড়ে নিয়মকে ভেঙেচুরে লাথি মেরে রক্তচোখ হোক এ শহরে আর একবার শেষবার ঝরুক কান্নার জল ভেসে যাক জমে থাকা বিশ্বাস, পার্টিলাইন আর বনলতা আশা - ভালবাসা - নর্দমার পাঁকের মত প্রেমহীন সুখী গৃহকোণ এ শহর এখন বড় বিষময় বড় বন্ধুহীন বরং আরো একবার নীলকন্ঠ হও শোক আর কান্নার জল নিংড়ে আর একবার প্রেম আর ধিক্কারের মিলন ঘটুক ( ঋত্বিক ঘটকের কথা মনে করে ) ডালাস 

তিলচন্দন

১. যে হাতে তুমি সন্তানকে স্পর্শ করো সেই হাতে আজ রক্ত লেগে আছে যে হাতে দেবতার ঘন্টা বাজালে বাল্য অভ্যাসে ভাল করে দেখ তাতে রক্তের ফোঁটা ফোঁটা দাগ এমনকি যে হাত রাখলে বন্ধুর কাঁধে তাতে লেগে বাসি হওয়া রক্তের দাগ যে হাতে তিল তিল করে বানিয়েছো ভিটে মাটি বাড়ি দুবেলা করজোড়ে তিল ও তুলসী দাও পরম আহ্লাদে সেই হাতে আজ পুড়িয়ে এসেছো অন্য এক মানুষের ঘর, সন্তান এবং সংসার ২. রাত্রি মধ্যযাম জানি তোমারো ঘুম ভেঙে যায় মনে পড়ে অচেনা শিশুটির থরো থরো মুখ নারী আর বৃদ্ধের অসহায় আর্ত চিৎকার আর তারপর রক্তের ফিনকি ফোয়ারা ভাল করে ভেবে দেখো কোথায় দাঁড়িয়ে আছো তুমি দুহাতে কতটা রক্ত কত ছাই পড়ে আছে বড় রাস্তায় এমনকি দেবতার কাছে দেখাবার মত মুখ আছে কি তোমার ? আর কে তোমার পায়ের নিচ থেকে সরিয়েছে মাটি শেয়ালের মত ঠোঁট চেটে তোমার হাত দিয়ে করেছে শিকার তোমার বন্ধু তার সন্তান আর পরিবার অসহায় অবিশ্বাস অনুতাপ আর অভিশাপ তোমাকে দিয়েছে ঠেলে অনন্ত রাত্রি জাগরণে ৩. রাত্রি মধ্যযাম পাশটিতে শুয়ে আছে সন্তান ও নারী স্পর্শ করো অনুভব করো দেখো ঘ্রান পাবে তাহাদের যাদের পুড়িয়ে এসেছো ওই হাতে আলিঙ্গন করে নাও শরীরের ওম তোমার নির্ঘুম অভিশাপ সঁপে দাও তাঁহাদের অশ্রুজল তুলসী বিস্বাসে দেখ কত পাপ ধুতে পারে গঙ্গাজল বেহুলার ভেলা ডালাস 

নিদান

অসুখ হয়েছে বলে মা গঙ্গার নাম করে দিব্যি কেটেছ এমনকি মায়ের নামেও কেননা তিনি সন্তানের দোষ দেখতে পান না যেমন দুটো খেতে পেলে গরিব ভোটেরা পুরোন সব কথা ভুলে যায় আর সেই সুযোগে ঈশ্বরের নামে তুমি নিদান লেখো পার্লামেন্টে আর গলা টিপে ধরে পুড়িয়ে মারো সব ভিন্নমত সহস্র দেশহীন শরীর ভ্যাবলার মত চেয়ে থাকে রাত তো অনেক হল - ঈশ্বর - উত্তর মেলে কই ? ডালাস 

বন্ধু

ছুঁয়ে থাকতে গেলে কাছে আসতে হয় জলচৌকিতে বসে দুটো কথা এক রোদ্দুরে গা ভিজিয়ে স্নান কাছে আসতে গেলে চিনতে জানতে হয় ভিড় বাসে ঘামে ভেজা শার্টের কলারে জন্মের দাগ খুঁজে হাতে হাত রেখে ঠিকঠাক চিনতে গেলে কথা বলতে হয় আসরে বাসরে নয় পুজো প্যান্ডেলেও নয় একা একা নিঃশব্দে কিংবা পাড়া জাগানো চিৎকারে কথা বলতে গেলে আবার ছুঁয়ে থাকতে হয় জল জাঙাল ডিঙিয়ে দিন দাহার পেরিয়ে আঙুলে আঙ্গুল রেখে রক্তের দাগকে সাক্ষী রেখে বন্ধু হতে গেলে বুকে রাখতে হয় আকাশের তারার মত নিশ্চুপ বসন্ত বাতাসের মত অবুঝ আর শ্মশান যাত্রার মতো দীর্ঘশ্বাস জমিয়ে রাখতে হয় গোপন কথাটির মত ডালাস