ঠিকানা

রাস্তা যেখানে পৌঁছয় সেটাই আমার ঠিকানা ঠিকানা লেখা হয় পরিচয় পত্রে শরীরে, উন্নাসিকতায়, বিপন্নতায় এবং মাথার চুলে সেখানে অনেকের সঙ্গে দেখা হয় কথাবার্তা - একত্র উল্লাশ - অলশ সন্ধ্যায় জমে ওঠে চেনা বৈতালিক - তারপর একদিন হাওয়া ওঠে জোর উল্টে পাল্টে দেয় উঠোনের চেনা বৈভব অগত্যা রাস্তা বদলে গিয়ে শুরু হয় নতুন নির্মান রাস্তা যেখানে পৌঁছয় সেটাই আমার ঠিকানা আমি তাকে পাশপোর্টে লিখে রাখি যাতে সে হারিয়ে না যায়

আমাকে দাও

তোমার অন্ধকার আমায় দাও আমি তাতে গাঢ় রং আলপনা দেব সিঁথিতে পরিয়ে দেব রক্তকরবী মালা কপালে যুদ্ধের টিকা তোমার নিরবতা আমায় দাও আমি তাকে দুমড়ে মুচড়ে ফেলে ভরে দেবো সূরহীন স্বরে অতলান্ত প্রয়োজন কাজের শীৎকারে তোমার অপমান আমায় দাও আমি তাকে সাজিয়ে দেবো প্রাত্যহিক গ্লানির সম্ভারে তোমার অসহায় হাত দুটি আমায় দাও আমি তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে যাবো দায়হীন সূর্যাস্তের দেশে আর তারপরও যদি কিছু বাকি থাকে তোমার সমস্ত কান্না আমায় দাও আমি তাকে বুক ভরে নেবো আমার দুচোখের জলে

জন্মদাগ ১০৪ 

একসময় একটি দলে ছিলাম গলা মেলাতাম চেনা শোনা সূরে এবং বেসূরে মিছিলে হাঁটতাম আহ্লাদে রাজপথ জুড়ে সেসময় হোলি খেলা হত আদরে ভেসে যেত প্রতিটি সূর্যাস্ত তারপর একদিন দলছুট হয়ে একা একা প্রান্ত প্রদেশে গিয়ে অন্য আরেক দলের সঙ্গে দেখা হল তারা দাওয়ায় বসতে দিলো হাতপাখা - শিতলপাটি - কুশল সংবাদ চোখে মুখে জলের ঝাপটা এরপর অনেক দলের সঙ্গেই আমার দেখা হয়েছে আঙুলে জড়িয়েছে আঙুল নিঃশ্বাসের সঙ্গে মিসেছে অন্য নিঃশ্বাস আহ্লাদের নানা রং এঁকেছে আদরের কতো কতো ছবি একসময় একটি দলে ছিলাম এখন অনেকের আদরের সঙ্গে থাকি পরম আহ্লাদে

জন্মদাগ ১০৩ 

আসলে বলবার মতন কথা বড় কম বরং বাতাসের নরম চুলে মাথা রাখো উড়িয়ে দাও দীর্ঘশ্বাস জনে জনে ডেকে বলে দাও গোপন সংকেত ঝগড়া করো পায়ে পা বেঁধে তার পর ঘরে ডেকে চা বিস্কুট কুশল সংবাদ আর সন্ধে হলে নদীর আঁচলটিতে বেঁধে রেখো যা কিছু জমিয়েছো এতোদিন তার পর ভাসিয়ে দাও রাত্রির গভীর বিশ্রামে আসলে বলবার মতন কথা বড় কম বরং কান্নার বুকে মাথা রেখো রাত্রির তৃতীয় প্রহরে ডালাস

জন্মদাগ ১০২ 

তিনি বহুরূপী তাই আমি তাঁর কাছ থেকে রূপটান শিখি বাধ্য ছাত্রের মত কিভাবে তিলকে তাল কিম্বা কিভাবে তিলক কাটতে হয় কিভাবে সাজাতে হয় নৈবেদ্যর থালা কোন ফুল কোন পূজোয় কতটা চন্দন কতটা চন্দন দিয়ে আঁকা যায় কতখানি ভুরু এবং কার কোন অধিকার অন্দরের ঠিক কোন গোপন মহলে কতটা বন্ধ করে রাখতে হয় চোখ রাত্রির ঠিক কোন প্রহরের ইঙ্গিত পেলে ঠিক কোন ইঙ্গিতে তাঁর সম্ভোগ সম্পূর্ণ হয় তিনি বহুরূপী তাই আমি তাঁর কাছ থেকে রূপটান শিখি ডালাস

জন্মদাগ - ১০০

যেভাবে চলে যেতে হয় সেভাবেই যেও ফিরে আসবার কথা দিয়ে কিম্বা না দিয়ে উৎসুক দৃষ্টিকে উপেক্ষা কিম্বা অবজ্ঞা করে মধ্যরাতে কানে কানে দেওয়া কথা একদম ভূলে গিয়ে - কিম্বা ভোলার ভান করে চলে যেও এভাবেই তো চলে যেতে হয় আসলে পেছনে তাকালেই বড় মায়া পড়ে যায় উনকোটি পায়ের ছাপ আলোতে অন্ধকারে মাখামাখি ঘামের আঘ্রাণ একরাশ খোলা চুলে জড়িয়ে রাখা দস্তাবেজ সবুজ কালিতে লেখা চিঠি আসলে পেছনে তাকালেই বড় মায়া পড়ে যায় তাই যেভাবে চলে যেতে হয় সেভাবেই যেও পেছনে তাকিও না ডালাস

জন্মদাগ ১০১ 

দেওয়াল জুড়ে আঁকা রয়েছে আমার শৈশব ঘুণ ধরেছে, তবুও সেতো আমারই এই সব সেসব কি আর হারিয়ে ফেলার - সেসব হেলাফেলার ? সেসব কি আর ইচ্ছে মতন বদলাবদলি খেলার ? এখন সূর্য পাটে বসবেন পশ্চিমে তাঁর ক্লান্ত যাতায়াত এখন সূর্য বাড়ি ফিরবেন স্টেশন রোডে আটকে থাকে চাঁদ এখন তাঁর রাজ্যাভিষেক তার জন্য বাণপ্রস্থের ঘোড়া এখন সন্ধা মধ্যবয়েস নিশ্চয়তার একাকীত্বে হাস্নুহানা খেলা তার মধ্যে খুঁজছি তোমায় - খোঁজাখুঁজিই সার বাজুবন্ধে যত্ন করে এলান সংসার দুহাত ভরে ফুল এনেছি দুহাত ভরে মালা তিন শালিখের দিব্যি দিলাম জলছবি বইমেলা হাপিত্যেস এসব নিয়েই এরাই আমার সব ঘূণ ধরা ঐ দেওয়াল জুড়ে একলাটি শৈশব ডালাস

পিতৃতর্পণ

চার কাহারে বয়ে নিয়ে যায় - একটি সময় আমি তার পা ছুঁয়ে থাকি গাছের পাতার মতন সমস্ত শরীর জুড়ে জমেছে লোনা জল| শহরের তাপ শুষে বালুতে রক্তকরবি - আর পায়েচলা গ্রামপথে খালি গা বালকের গলায় চন্দ্রহার - ভাষা অবান্তর শুধু রক্ত মাংস ঘাম আর অদম্য ভালোবাসা বুকে মানুষকে আলিঙ্গন | অতন্দ্র লেদ মেশিনে জমা কান্নার আর দাঁতে দাঁত চেপে ধরে থাকা হাত - প্রতিটি রক্তক্ষরণের প্রতিদান রক্ত গোলাপ আর শিশু করতালি মধ্যরাত্রে সসাগরা দূরভাষ - তোর জন্যই এই মানবজমিন তোর জন্যই জংলা ফুলের গন্ধ আর পায়ে পায়ে ঘরে ফিরে আসা তোর জন্যই - বন্ধুতার অমূল্য উচ্চারণ ...

জন্মদাগ ২০২২  ( ২১ শে ফেব্রুয়ারি ) 

একুশ আমার এক গালে টোল অন্য গালে চুমু এলান চুলে জট ফাগুন হাওয়া যা উড়ে যা ভিনদেশে যা বাতাস করিস হারিয়ে যাওয়া ওদের গদ্য হয়ে পাথর হয়ে একলা বসে যারা অবান্তর আমারই কথা ভাবে একুশ আমার চোদ্দ আনা কুড়িয়ে পাওয়া মানিক আদরে আর আহ্লাদে এক নাছোড় বাউলমেলা দীঘির জলে তলিয়ে গেছে সময় যেমন হারায় না থাকা সেই কাজলাদিদির স্মৃতি একুশ আমার এক গালে টোল অন্য গালে চুমু এবং এখন চোখের কোনে কালি ডালাস 

পলাশ

পলাশ দেখলেই আমার পা আঁটকে যায় থমকে দাঁড়ায় সময় আর একছুট প্রান্তিক স্টেশন পলাশ দেখলেই আমার বুক কেঁপে ওঠে ঠোঁট কামড়ে আঙুল রক্ত আর হৃদয়জোড়া অনাবিল পাপ পলাশ দেখলেই তাকে তুলে নিই স্বার্থপরের মত যাতে তোকে পরিয়ে দিতে পারি পলাশ দেখলেই আজকাল দুদন্ড দাঁড়িয়ে থাকি মনে হয় আর একবার যদি ঠিক ওখান থেকেই সব শুরু করা যেত ডালাস