জন্মদাগ ১০

আমি বারবার তোর কাছেই ফিরে ফিরে আসি একঘেয়ে বটে নেহাত আটপৌরে জীবন যাপন একচিলতে বারান্দা লোহার গ্রিল – সকালের নরম রোদ্দুর তাতে পা ডুবিয়ে ফুসফুস ভরে দীর্ঘশ্বাস আমি বারবার তোর কাছেই ফিরে ফিরে আসি যত রাগ অভিমান – অপমান – অসহায়বোধ দুহাতে ফুলের মত মালা জপে ভাসিয়ে দিই নদীটির জলে আমি বারবার তোর কাছেই ফিরে ফিরে আসি ভালোবাসি বুকে চেপে ধরি বছরে একবার করে তোলপাড় করে এক সাথে কাঁদি আমি বার বার তোর কাছেই ফিরে ফিরে আসি বাড়ি ফেরার রাস্তা এভাবেই স্টেশন রোড থেকে ট্রামলাইন ঘুরে কৈশোরকাল এসে থামে ডালাস 

জন্মদাগ ১১

সঙ্গে যারা ছিল তারাই জানে পাথর কেটে রাস্তা গড়ার মানে জানলা দরজা উঠোনে চৌকাঠে লতায় পাতায় জড়িয়ে আছে সুখ মেঘের মতন জল জমেছে মনে নদীর মতন বয়ে চলেছে একা সঙ্গে যারা ছিল তারাই জানে একসঙ্গে বয়ে চলার মানে কুড়িয়ে পেলাম তোমার একা মুখ পাথরচাপা – অশ্রুজলে ভেজা বালুর বুকে জংলা ফুলের সাধ গাছ হয়েছে মাথার জঙ্গলে সঙ্গে যারা ছিল তারাই জানে অপাপবিদ্ধ জীবনখানির মানে ডালাস 

জন্মদাগ ১২

এখনো বৃষ্টি সেই আঙিনায় ঝরে ? গোধূলির ট্রেন সিগন্যালে থেমে যায় ? তোমার চিবুকে তিল ও জ্যোৎস্না ফোটে ? বুক ভার হয় – ঠোঁটে কি রক্ত জমে ? আমি জানি সেই শহরের লোকে ভালো আদরে সোহাগে আগলে রেখেছে তোমায় তুলসী তলায় প্রদীপ জ্বলেছে রোজ নিকোনো উঠোনে শ্যাওলা জমে নি কোনো আমি আজ ও চলি যেদিকে দুচোখ যায় পায়ে পায়ে আর সময়ের হাত ধরে যদি দেখা হয় – সিগন্যালে ট্রেন থামে দিয়ে যাবো তোকে গোধূলি ট্রেনের আলো ডালাস 

জন্মদাগ ১৩

বরং খানিকটা দূরেই থেকো বেশি কাছে এলে বড় মায়া পড়ে যায় বারান্দায় বিকেলের ফিকে আলো এলোমেলো পায়ে ছায়াদের মত ফিসফিস করে কত কিছু বলে বাতাসের অক্ষরে চিঠি কানে কানে কত কানাকানি সন্তান সংসার রমণী নিত্যনৈমিত্যিক এইসবকিছু দেবতার চন্দন স্নেহে গোগ্রাসে পান করি আমি গোধুলীকে চেটে পুটে আহ্লাদী বেড়ালের মত পায়ে পায়ে ঘুরি মুঠো করে রেখে দিই যেন হারিয়ে না যায় এইসব বড় আদরের – তুমি আরো বেশি তাই বরং খানিকটা দূরেই থেকো বেশি কাছে এলে বড় মায়া পড়ে যায় ডালাস 

জন্মদাগ ১৪

সমস্ত আদর শেষ হবে একদিন - সব আলিঙ্গন শেষ হবে মুঠোভর্তি অসহায় বাতাসের ক্লান্ত পিছুটান গোধূলি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে আলপথে শরীরের ছায়া - চেনা আজানের সূর উড়ে যাবে ভিনদেশি পাখিদের মত উড়ে যাবে এলানো আঁচলে বেঁধে রাখা লক্ষী পাঁচালি ধূসর মাঠের শেষে পীরবাবা পুকুরে ঝাঁপ দেওয়া বেহুলার ভেলা ভেসে যাবে যেমন সে যায় সমস্ত আহ্লাদ ফেলে রেখে একলা চলে যাবে সমস্ত আদর শেষ হবে একদিন - সব আলিঙ্গন বাসি হওয়া সিঁদুরের দিব্যি - থেকে যাবে এক জন্মদাগ কে তার হিসেবে রাখে ? কেউ রাখে ? ডালাস 

জন্মদাগ ১৫

বাজ পড়েছিল বুড়ো গাছটায় বহুদিন আগে বাবুই বুনেছে বাসা তার বুকে পরম আদরে একটু একটু করে - এর ওর এঁটো কাটা কুড়িয়ে বাড়িয়ে জানলায় দিয়েছে ছিটকানি - দরজায় খিল চোর আর ভোট থেকে রেখেছে বাঁচিয়ে তারপর নতুন বছরের সুখে পাখিরা দল বেঁধে উড়ে যায় - এর ওর সাথে কথা বলে -৫ দোল খায় বাতাসের ঝুলন্ত ডালে মাঝে মাঝে অন্য কোনো গাছ ঘুরে আসে সেখানে সবুজ আরো বেশি - হাওয়া আর উত্তাপও বেশি মনে হয় দলছুট দুয়েকটি চলে যায় প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে কিন্তু তারপর শীত পড়ে গেলে - স্বপ্নের তাপ কমে আসে পাখিদের শীত করে - এক এক করে সক্কলে ফিরে আসে ঘরে বাজ পড়া গাছটির বুকে বাবুই বাসাতে বাজ পড়েছিল গাছটিতে বহুদিন আগে বাবুই বুনেছে বাসা তার বুকে পরম আদরে ডালাস 

জন্মদাগ ১৬

এই তো ছুঁলাম হাত ঠিক যেমন চেয়েছিলে স্পর্শ করলাম তোমার চিবুক দুহাতে জড়িয়ে ধরলাম বাতাস ওড়াবো বলে কিনে আনলাম মোমবাতি সুখ নীল পায়রার সারি এই তো ছুঁলাম হাত ঠিক যেমন চেয়েছিলে রূপকথা শব্দেরা ভিড় করে এলো মাঠজুড়ে বৃষ্টি ভেজালো চোখ ভেজালো মধ্যরাত সহজিয়া বিছানায় অতলান্ত রাত্রি গাঢ় আর গভীর সুখে রইল জড়িয়ে এই তো ছুঁলাম হাত ঠিক যেমন চেয়েছিলে সিঁথিতে সিঁদূর আঁকবো বলে তুলিতে রোদ আর দুচোখে গোধূলি সমস্ত শহর জুড়ে সেইদিন অসময় হোলি এই তো ছুঁলাম হাত ঠিক যেমন চেয়েছিলে সমস্ত কপাল জুড়ে সেই থেকে পোড়া জন্মদাগ ডালাস 

জন্মদাগ ১৭

পিঠ সোজা করে বসতে বলতেন বাবা মাথা উঁচু করে হাঁটতে রাতে খাবার পরে বজ্রাসন কৈশোর থেকে দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমেছে শহরে এখন টুপটুপ করে তারা জ্বলে উঠবে এবাড়ি ওবাড়ি গলবস্ত্র শঙ্খ বাজলো - কুয়াশা নামলো আজানের সূরে আর কেনা বেচা শেষ করে জীবনের গলিপথে বসত বাগানে ফিরে এলো বাস্তুসাপ - যেমন ছায়ায় ফেরে পাখিদের দল যেমন ছায়ায় ফেরে পাখিদের দল - তেমন ই নিরন্তর আজানের সূর আর শঙ্খধ্বনি মিলে মিশে সান্ধ উৎসব আমাদের ছেঁড়া খোঁড়া জীবনের অতলান্ত টিভি সিরিয়াল চলতেই থাকে শুধু মনে থাকে না পিঠ সোজা করে বসতে বলতেন বাবা মাথা উঁচু করে হাঁটতে রাতে খাবার পরে বজ্রাসন ডালাস 

জন্মদাগ ১৮ 

তুমি আমাকে পলাশ ফুল তুলে দিতে বললে আর আমি বাতাসে উড়িয়ে দিলাম আবির বৈতালিক তখন প্রায় শেষ তুমি আমাকে চুপিচুপি চিঠি লিখতে বললে আর আমি হা পিত্যেশ বসে সন্ধেতারার আশায় রেডিওতে তখন অনুরোধের আসর তুমি ভিড় ট্রেনে আমার হাত চেপে ধরলে আর আমি বৃষ্টির জলে কাগজের নৌকো কর্ড লাইন জুড়ে তখন শুধুই সবুজ সিগন্যাল তুমি মেলার মধ্যে হারিয়ে যেতে যেতে আমায় ডাকলে আর আমি বাউলের ডুপকিতে বাজতে বাজতে পৌঁছে গেলাম ভুবনডাঙার মাঠে আর এতদিন বাদে যখন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালে ফেসবুকে সেই পলাশ, বেগুনি রঙের চিঠি, মেন্ লাইনের কল্যাণী লোকাল আর কালাচাঁদ দরবেশ অঝোরে আমার হাত চেপে ধরল আমি সবকিছু ভাসিয়ে দিলাম কোপাইয়ের জলে ডালাস 

জন্মদাগ ১৯

দুইহাত ভরে নিতে ই শিখেছি শুধু দেবার মতন আমার কি আছে বলো ? পায়ে চলবার পথটি দিয়েছে ঘর জানলা দরজা দুইহাট করে খোলা বাতাস তাহার জন্ম পাহারাদার বৃষ্টির ছাদে হৃদয় পুষ্করিণী শহরের ছাদ পিচগলা আহ্লাদ মেঘ রোদ্দুর তারা চেনবার খেলা পাখিরা এখানে কথা দেয় কথা নেয় আমি বুক ভরি গোপন উচ্চারণে উচ্চারণে জমে নি কখনো ক্লেদ ঠিকানা বদলে বাড়ি হয়ে ওঠে ঘর রমণীর সুখে নিকোনো উঠোন খানি সন্তান সুখ এবং নির্ভরতা নির্ভরতা এখন গায়ের চাদর দরজা বন্ধ জানলা ভেজিয়ে রাখা পাখিরা এখন অন্যশহরে যায় কথা দেয় আর কথা নেয় বিস্বাসে দুইহাত ভরে নিতে ই শিখেছি শুধু দেবার মতন কি আমার আছে বলো ? ডালাস