জন্মদাগ ৩১

যে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে - থাক যার শরীরে আগুন জ্বলে - জ্বলুক বৃষ্টি পড়ুক যেখানে মেঘের মন যার যে যে রঙ মন্দ লাগে - লাগুক আমি তাঁদের ছায়ার সঙ্গে থাকি আকাশকে বলি মন্দসূখের কথা লুকিয়ে রাখি মাঝবয়েসের সাধ বুকপকেটে - শিশুকালের মতন আমি তাঁদের অন্ধকারের সাথী দৌড় দৌড় - ভূবন ডাঙ্গার মাঠ যেখানে কেউ যায় নি সাহস করে যেখানে কেউ যায় না কারুর সাথে যে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে - থাক আমি তাঁদের ছায়ার সঙ্গে থাকি অসাবধানী স্মৃতির আবডালে পরম যত্নে কেবল ছুঁয়ে থাকি ডালাস 

জন্মদাগ ৩২

আমি যাকে চিনতাম তার নাম লেখা ছিল তারাটির মধ্যকপালে দিক ভূল হলে অচেনা রাস্তার মোড়ে ছাই রঙা গাড়ি এসে ডেকে নিয়ে যেত ঊর্ধ্বশ্বাসে পৌঁছে দিত চেনা গলিটিতে নরম আশ্রয়ে আমি যাকে চিনতাম তার নাম তোমার নামের সঙ্গে মিলে যেত বলে সব কিছু ভূলে নিশির ডাকের মত পালিয়েছি একসাথে অন্য শহরে আমি যাকে চিনতাম তার নাম কাগজের প্রতিটি পাতায় লেখা হত শপথের মত আর মন্ত্রের সূরে আমি যাকে চিনতাম তার নামে - মিলিয়ে রেখেছি নাম তার আমি যাকে চিনতাম ... ডালাস 

জন্মদাগ ৩৪

ফুটবল ম্যাচে হেরে গিয়ে ঠোঁট চেপে বাড়ি ফিরে মিথ্যে বলেছি বহুবার গলা কাঁপে নি একবার ও শুধু রাত্রিবেলা ভিজে গিয়েছে বালিশ ইংরেজীতে ফেল করবার পর চড় আছড়ে পড়েছে গালে রাগে রি রি করে জ্বলেছে শরীর - তবু চোখ ফেটে জল আসে নি এক ফোঁটা ও আর রাত্রিবেলায়, মায়ের ঠাণ্ডা হাত যখন এলোমেলো করে দিচ্ছে মাথার চুল, আমি বুকভাসানো কান্নার সূখ স্পর্শ করতে শিখেছি সারা রাত জেগে লেখা পোস্টার যখন পরের দিন ছিঁড়ে কুটি কুটি হয়ে নর্দমায় ভেসে গেছে তখন নয় কলেজ ইউনিয়নে হেরে যাবার পরেও নয় এমনকি পুলিশের থাপ্পড় খাবার পরেও নয় কিন্তু চেনা বন্ধুটি যেদিন অচেনার ভান করে চলে গেল আমি কৈশোর পেরিয়ে বড় হয়ে গেলাম শিখলাম চোখের জল জমিয়ে রাখতে হয় শেষ ট্রেনে বাড়ি ফেরবার জন্য তারপর তুমি এলে সন্ধ্যায় তারা উঠলো আকাশ জুড়ে জোনাকীর আলোয় মহা ধুম ধাম করে আকণ্ঠ নাচ গান হল - মাদল বাজল - আর উল্লাশ যখন পূর্ণিমার মত উজ্জ্বল ঠিক তখনই কালবৈশাখী হাওয়া এসে উড়িয়ে নিয়ে গেল আমাদের - একরাশ ধুলোর মত ছুঁড়ে ফেলে দিল পৃথিবীর অন্য কোনায় - অন্য পাঠশালায় আর সেইদিন থেকে আমি যৌবনের লোনা জলে ভাসতে শিখলাম এখন মধ্যরাতে ঘুম ভাঙে সন্তানের গায়ের চাদর ঠিক করে দিই মাথার চুলে বিলি কাটি আনমনে ছুঁয়ে থাকি যতক্ষণ ছুঁয়ে থাকা যায় যেমন করে আমায় ছুঁয়ে থাকতো আমার মা আমার সন্ধ্যাতারা, শেষ ট্রেন বনগা লোকাল সাগরের লোনা জলে প্রশান্ত হয়েছে বহুদিন দৌড়বার মতো কিছু বাকি নেই - বিস্ময় ও নেই বলবার মতো কিছু নেই আর শুধু জানলার বাইরে অপেক্ষারত অমাবস্যা আর তার সঙ্গে অবান্তর আলাপচারিতার অভ্যাস ডালাস 

জন্মদাগ ৩৫

তুমি হারিয়ে ফেললেও আমি জমিয়ে রেখেছি চিঠি ডাকটিকিট আর সবুজ ফাউন্টেন পেন অসাবধানে পড়ে যাওয়া কয়েকটি কালির ফোঁটা আর সারা রাত বার বার পড়ে ফেলা অক্ষরমালা তুমি হারিয়ে ফেললেও - আমি জমিয়ে রেখেছি সব কিছু তুমি চোখ সরিয়ে নিলেও আমি একঘেয়ে সূরের মতো তোমার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াই এর ওর সাথে কথা বলি ঝগড়া করি - পুতুলের বিয়ে দিই সন্ধ্যায় শঙ্খ বাজিয়ে ডাক দিই তুমি চোখ সরিয়ে নিলেও আমি সেই একঘেয়ে সূর হয়ে বাজতেই থাকি তুমি নিমন্ত্রন না করলেও আমি ঠিক চলে আসি আলপনা আঁকি একমনে কপালে চন্দন - শরীরে ফুলের অলঙ্কার পরাই শয্যা সাজিয়ে রাখি যাতে কোনো ত্রুটি না হয় তুমি নিমন্ত্রন না করলেও ... আমি সবাইকে ডেকে নিয়ে আসি তুমি ভূলে গেলেও আমি কিছুতেই ভূলতে পারি না সেই সব অঙ্গীকার - অসম্ভব দাবী চেনা হাতে হাত রেখে - চেনা বিস্বাসে - নিস্বাস নেওয়া তুমি ভূলে গেলেও আমি কিছুতেই ভূলতে পারি না সেই সব আর দিন শেষ হয়ে এলে তুমি চলে যেতে বললেও আমি বার বার ফিরে আসি যেমনটি ফিরে আসে শৈশবের স্মৃতি, বালক বেলার মাঠ হারিয়ে ফেলা বাসের টিকিট আর সন্ধ্যার আবছা কুয়াশা ... তুমি চলে যেতে বললেও ... আমি বার বার - ফিরে আসি - অভ্যাসে - অসহায় ভাবে - ভালবেসে -... ডালাস 

জন্মদাগ ৩৬

তুমি তোমার মায়ের চোখের দিকে তাকাও দেখবে চালশে পড়া দৃষ্টি এখনোও পুরোন হয়ে যাওয়া স্বপ্ন দেখেই চলেছে আর পুরু চশমার ফাঁক দিয়ে গড়িয়ে পড়া অন্তহীন স্নেহ শুধু তোমার জন্য তুমি তোমার বাবার চোখের দিকে তাকাও দেখবে তোবড়ানো গাল আর ক্ষয়াটে কপালের ভাঁজে চেনা সময়ের অনেক অজানা কথা লেখা রয়েছে যা আগে জিজ্ঞেস করতে শেখো নি - সেই সব গোপন আখ্যান তুমি তোমার বন্ধুর চোখের দিকে তাকাও দেখবে কি অসম্ভব বিশ্বাস নিয়ে সে তোমায় ছুঁয়ে রয়েছে তারপর তুমি শহরের চোখের দিকে তাকাও দেখবে তুমি আসবে বলে কাল সমস্ত রাত বৃষ্টি হয়ে ধুয়ে রেখেছে রাজপথ মালা আর চন্দন নিয়ে বাতাসের ইশারায় ভর করে কত বছর ধরে কত যন্ত্রণা নিয়ে সে তোমার জন্য অপেক্ষায় বসে আছে তুমি তোমার বাবা, মা, বন্ধু আর নিজের শহরের চোখের দিকে তাকাও আর তারপর আয়নায় নিজের দিকে তোমার লজ্জা করে না ? ডালাস 

জন্মদাগ ৩৭

এই জলটি সেই নদীটির চোখের জলের খবর জানে যে পাত্রে রাখলে তাকে পাত্রখানি নিজের করে তাকেই বুকে জড়িয়ে ধরে ফুল ফোটালো চাঁদকপালে টিপ পরালো যত্ন করে নৌকো গড়ে জোয়ার টানে ভাসিয়ে দিলে অথচ তার শরীর জুড়ে উজানের সূর বাঁধ মানে না পদ্মপাতায় জল সরে না যেখানেই তার ঠিকানা হোক সে কেবলই জড়িয়ে থাকতে শিখেছিল বাবার কাছে মায়ের কাছে এবং রাজপথের কাছে এবং রুক্ষ হাওয়ার কাছে যেখানেই থাক, সন্ধ্যাবেলায় বাড়ি ফিরতে শিখেছিল এই জলটি সেই নদীটির সঙ্গে থাকে চোখের জলের খবর রাখে ডালাস 

জন্মদাগ ৩৮

তুমিই তো বলেছিলে ঈশ্বরীর কথা লাল পাড় শাদা শাড়ি কপালে আগুন আর মধ্য গঙ্গায় ঝড় অবান্তর জ্বলে পুড়ে খাক হল বসতী বান্ধব মরে গেল একা একা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া বালকের চোখ তাকাতে পারি নি আমি - তাই সেই পাড়ানির কড়ি গুনে গেঁথে জমিয়ে রেখেছি এতোদিন - এতো - দিন সুখে আর শান্তিতে ছায়ার বিজ্ঞাপনে ঘুমিয়ে রয়েছি কুম্ভকর্ণের মত তুমি বলেছিলে বলে ঈশ্বরীর কানে কানে জপমালা শুধু তুমি বলেছিলে বলে সমস্ত যৌবন পেতে সাজিয়েছি শান্তি আর স্বস্তির থালা শুধু তুমি বলেছিলে বলে !!! এইবার সূর্য ক্লান্ত হল ফুরালো হিসাবের খাতা শরীরে ছায়ার গন্ধ - পায়ে বিস্মরন আমি তাই নতজানু প্রার্থনায় বসি অপরাহ্ন শান্তি নয় রসাতল দাও প্রভূ একবার চেটে পুটে খাই ডালাস 

জন্মদাগ ৪২০

সত্য বলতে পারি না তাই আড়ালে আবডালে মধ্যরাতে কবিতার তাঁবেদারি করি শব্দের তুলিতে আঁকি বাংলার ফেলে আসা অনাবিল মুখ শূণ্য গেলাসের মতো রাজপথে ফেলে দিই ভাঙা অঙ্গীকার আর - পড়ে থাকে দুচোখ কালো করে জমে থাকা একরাশ অসহায় মেঘে ঢাকা তারা - তার দিকে তাকাতে ভয় করে তখন অঙ্ক কষি কতো ধানে ঠিক কত মণ "মন" কেনা যায় সত্য বলতে পারি না তাই আড়ালে আবডালে মধ্যরাতে কবিতার তাঁবেদারি করি ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ডালাস 

জন্মদাগ - প্রেম

অজান্তেই দেখা হয়ে গেল - গন্তব্য ছিল না ঠিক করা কিম্বা স্থান কাল পাত্র কোনোকিছুই - অথবা দায়িত্ব - দায়ভার - প্রয়োজন - এমনকি ভাগ্যের অযাচিত আশির্বাদ - কিছুই ছিল না - তবু - সময়ের শ্রোতের সাথে গড়িয়ে গড়িয়ে স্টেশন রোডের আবছায়া গন্ধ চেনা মুখ - অজান্তেই দেখা হয়ে গেল আর তারপর কিছুক্ষন রক্তক্ষরণ আলতার মত উঠোনে জানলায় অবগুন্ঠনে ... অজান্তে - অজান্তেই ... অনিকেত এক জন্মদাগ ডালাস

জন্মদাগ - বিশ্বাস

আমার সমস্ত বিশ্বাস তোমায় দিলাম তুমি তাকে খোঁপা করে পরো আমি দেখি - বেশ লাগে তারপর তোমার আশঙ্কা আমায় দাও আমি ড্রেনের জলে তাদের ভাসিয়ে দেবো কাগজের নৌকোর মত এই সব দেওয়া নেওয়া করতে করতে সন্ধ্যা লাফিয়ে নাববে আমাদের মফস্বলের অল্প পাওয়ারের স্টেশন রোডে আর আমরা পৌঁছে যাব প্রান্ত স্টেশনে যেখানে রাত বাড়লে এখনো উনুনে আঁচ পড়ে গরম ভাতের ধোঁয়া নাকে মুখে চোখে লাগে বেশ স্বচ্ছন্দ লাগে - বেশ লাগে ডালাস