আত্মকথন

নিজের সম্পর্কে লেখা কঠিন … আকাশ, চাঁদ, গ্লোবাল ইকোনমি কিম্বা জনগনতান্ত্রীক বিপ্লব এবং তার ব্যবহারিক ধাষ্টামো সম্পর্কে লেখা অনেক সহজ … তবু … জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং কর্মশুরু কল্লোলিনী কলকাতায় – হ্যাঁ – সেই কলকাতায় যে তখনো কল্লোলিনী ছিলো … এখন সাজে আর সৃঙ্গারে তিলোত্তমা হয়েছে – সেই কলকাতায়। শৈশব কেটেছে বইএর সঙ্গে কথা বলে – বইকে পাশে নিয়ে ঘুমিয়ে। কৈশোর হোস্টেলে – নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের কড়া শাসনে – অতএব সুযোগ মিলতেই এক দুই তিন … ধা … মৌলানা আজাদ কলেজ, মধ্য এবং উত্তর কলকাতার সর্পিল গলিঘুঁজি, কফি হাউস আর গ্লোব, যমুনা, লাইট হাউসের সেলুলয়েডে উচ্চ মাধ্যমিক যাপন – তারপর যদুবাবুর হট্টমেলায়। ঝিলের এপাড় - ওপাড়, এস এফ আই – ডি এস এফ এর চর্বিত চর্বন নিয়ে চার চারটি অগোছাল কিন্তু অদ্ভুত অনুভবের বছর … হাতেখড়ি লেখালাখিতে – লিট্‌ল ম্যাগাজিন “ঝোরা” – বৈঠকখানা বাজার থেকে কাগজ কিনে গোয়াবাগান লেনের দক্ষিনেশ্বরী প্রেস থেকে বই ছাপিয়ে বইমেলায় হাতে হাতে বিক্রি করা … কেমন ছিলো বনের মোষ তাড়াবার এইসব মূহুর্তগুলি? জয় গোস্বামীর মতন করে বলতে ইচ্ছে হয় … “ ঘুঁটিরও সেই প্রথম মরণ – প্রথম মরণ - মানে? বুঝবে কেবল তারাই যারা ক্যারাম খেলা জানে…” যাই হোক … ক্যারম আর ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির গন্ধে মশগুল থাকতে থাকতেই একসময় রোদ্দুর উঠে পড়ে – আর গোল্লাছুট জীবন বদলে যায় সফটওয়্যার কবাডিতে … আনন্দবাজার পত্রিকায় কয়েকবছর ( পাঠক ভূল ভাববেন না – চাকরিটা নেহাৎ টেকনিক্যাল – বাংলার সঙ্গে যোগ ছিল নাইট শিফটে জনগনের আগে কাগজ পড়ার সুযোগে ) - তারপর দিল্লী হয়ে ফিলাডেলফিয়া ঘুরে নিউ জার্সি / নিউ ইয়র্কে হাডসনের জল খেয়ে চোঁয়া ঢেঁকুর তুলতে তুলতে বিবাহ পরবর্তী যাপন রৌদ্রস্নাত ক্যালিফোর্নিয়া এবং ব্যাঙ্গালোর ঘুরে ডালাস, টেক্সাসে পুত্র, কন্যা এবং ঘরণী সহ সংসারধর্মে নিবেদিত প্রাণ ...

লেবু পাতায় করমচা

ফেটে যাওয়া জলের পাইপ আর অনাবিল বৃষ্টির জল মিলে মিশে একসাথে বয়ে চলেছে এক অচেনা লক্ষের দিকে। বাঁপাশে মানুষের ভিড় … বাজারী মানুষ প্রাত্যহিক বাজারশিল্পে মগ্ন … এক কিলো আলু, আড়াইশো পেঁয়াজ, পঞ্চাশ কাঁচালঙ্কা … কাতল কত করে গো? মানুষের ভিড় – কেজো মানুষেরা বাসস্টপে দাঁড়িয়ে … সুন্দর ইস্তিরি করা নির্ভাঁজ একরঙা জামা … চকচকে জুতো, ঘড়ি, চশমা, ব্যাগ এবং টাক … মাথায় চিন্তা। ইস্কুল যাত্রী মানুষের ভিড় – বইয়ের ভারে, কম্পিটিশনের ভারে, বাবা-মার পিয়ার প্রেসারের ভারে ভোরবেলায় চোখে মুখে অসহায় ক্লান্তি। মানুষের ভিড় … অকেজো মানুষের ভিড় ফুটপাথের জবরদখল পন্ডিতের চায়ের দোকানে … বয়স্ক তাই অকেজো … বয়স্ক তাই অঢেল সময় … বয়েস হয়েছে তাই মর্নিং ওয়াক সেরে চটজলদি বাড়ি ফেরার বিশেষ দায় নেই … । মানুষের ভিড় … ধান্দাবাজ এবং রাজনৈতীক মানুষের ভিড় … বাজারের কোনে পাড়ার মোড়ে পার্টি অফিসের বন্ধ দরজার সামনে কিসব জটিল হিসেব নিকেশে ব্যাস্ত … আর ডান দিকে রেলব্রিজ … উঁচু হয়ে উঠে যাওয়া সভ্যতার অশনি সঙ্কেত … পাঁচ মিনিট দশ মিনিটে ছুটে যাচ্ছে শিয়ালদাগামী বাদুড়ঝোলা ট্রেন … কেউ উর্ধশ্বাসে … কেউ বা গজেন্দ্রগমনে … ঠিক ওখানটাতেই কিছুদিন আগে কে একটা কাটা পড়েছিল না? নাকি গলা দিয়েছিল ? কে জানে … কি দরকার জেনে ? যত কম জানা যায় ততোই ভালো … বিশেষত গায়ে না লাগলে হাওয়া যতোই দিক তাতে কি আসে যায় … আমরা আছি আমাদের তালে … ঝক্কি ঝামেলা কম? সকালে উঠে ঢুলু ঢুলু চক্ষে বাজারযাত্রা … গত রাতের খোঁয়াড়ি ভাঙে না … তাই হিসেব গুলিয়ে যায় … সব্জির দাম তো অ্যাবসার্ড রকম বেড়েই চলেছে… তায় আবার পেস্টিসাইড আর হর্মোন ইঞ্জেকশন দেওয়া … মাছের বাজারে তো ঢোকা যায় না … পকেটে টান … থুড়ি ফাঁক হয়ে যায়। আর মাঝে মধ্যে বুক ঠুকে ঢুকে পড়লেও লোভী লোভী চোখে মেরিলিন মনরোর মতো শুয়ে থাকা ইলিশ সুন্দরীর দিকে তাকাতে তাকাতে কাতলা, সিল্ভার কার্প, কাটা পোনার দরদস্তুর … হলিঊড না হোক আমাদের টলিউডি শতাব্দীই সই … এবং ঘন্টাখানেকের ইমোশনাল রোলার কোস্টার রাইড শেষ করে জয়-পরাজয়ের আধাআধি অনুভুতি গায়ে মেখে, বাইরে একফালি হাসি ঝুলিয়ে মাথার মধ্যে একঝলক রাগ নিয়ে বাড়ির পথে … আমরা আছি আমাদের তালে … ঝক্কি ঝামেলা কম? কাজের লোক ঠিক সময় আসে না … ওদিকে দুধের গাড়ী এলো কি না … ছেলে মেয়েদের ডেকে তোলা … ওকে বাজারে পাঠানো … ফিরে আসলে বাজার তোলা … তার মধ্যে একঝলক খবরের কাগজে চোখ বুলিয়ে কেচ্ছা - কেলেঙ্কারিগুলো মাথায় ঢুকিয়ে নিয়ে আবার রান্না ঘরে ঢুকে যাওয়া … আর এই সবকিছুর মধ্যে এক মিনিটের শীর্ষ সম্মেলন … সন্ধ্যার প্ল্যান প্রোগ্রাম … আমরা আছি আমাদের তালে … ঝক্কি ঝামেলা কম ? দুটো নাকে মুখে গুঁজে অফিস … ঠিক সময়ে বাস স্ট্যান্ডে… বেণী ঝুলানো ওই কলেজমেয়েটাও তো সেই সময় … দেখেও না দেখার ভান … দত্তবাবুর সঙ্গে দুটো রসের কথা … ট্রাফিক জ্যামের জটিল হিসেব নিকেশ … অতঃপর “সদাগরী অফিসের কনিষ্ঠ কেরাণী”-র চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালের পাঁচতলায় একফালি টেবিলের নিরাপত্তাবোধ। আমরা আছি আমাদের তালে … ঝক্কি ঝামেলা কম? কাল রাতে দেড়টা অব্দি সোহিনির সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে … ওর সঙ্গে কিন্নরের ব্যাপারটা খুব সেন্সিটিভ স্টেজে চলে গেছে … কি করে যে ঠিক করা যায়! … সিদ্ধার্থ অবিশ্যি অনেকটাই ম্যাচিওর্ড … আমার ব্যাপারটা বোঝে - অনেক ডাউন টু আর্থ … আসলে ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছেলে তো। কিন্নর টা ইডিয়েট … কাঁধে শান্তিনিকেতনী ব্যাগ ঝুলিয়ে সাহিত্য সাহিত্য করে বেড়ালে চলে? … সোহিনির ও তো একটা সহ্যের সীমা আছে না কি? সকালে আবার ফোন করবো ভেবেছিলাম… কিন্তু জরিনা মাসী না আসায় ঘর ঝাঁট দিতে হল … কি হয় একদিন ঘর ঝাঁট না দিলে? মা যদি একটু ইন্টেলেকচুয়্যাল হত !!! আর দেখো … কারো কিছুতেই কিছু যায় আসে না … যেমন ওই বাচ্চা ছেলেটা … বছর পাঁচেক বয়েস হবে … পরনে একটা শতঃচ্ছিন্ন হাফ প্যান্ট … আর ওর সঙ্গে একটা মেয়ে … কয়েক বছরের বড় হবে … প্রতিদিন ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে নিচ্ছে সভ্যতার উচ্ছিষ্ট …। না … রেলগাড়ি দেখে ওদের বিষ্ময় জাগে না … সম্ভবতঃ ওদের জন্ম রেল লাইনের ধারের বস্তির কোন একটা খুপরী ঘরে। না … ওদের বাবা পুরোহিত নন… পালাও লেখেন না … সত্যি বলতে কি ওদের বাবার খোঁজ পাওয়া যাবে এমন মাথার দিব্যি কেউ দিতে পারবে না। তবু হঠাৎ যখন আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামে … ফুটো ফাটা বাসস্ট্যান্ডটার তলায় ওদের ছোট্ট চড়ুইভাতি পন্ড হতে বসে আর ওরা চোখ বন্ধ করে বলতে থাকে “লেবু পাতায় করমচা … যা বৃষ্টি চলে যা …” এই দৃশ্য সেলুলয়েডে ধরে রাখার নয় … সংবাদপত্রে ছাপার নয় … ইন্টারনেটে ব্লগ করার নয় … আর এইসবের টুকরো ছবির গায়ে গা লাগিয়ে আমার শহরে সকাল হলো … আমি চারতলার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে খবরের কাগজের খেলার পাতা আর চা একসঙ্গে গলাধ্বঃকরন করতে করতে তাতে স্নান করলাম … বলতে পারেন শুদ্ধ হলাম। কেজো না অকেজো কিম্বা সুন্দর না অসুন্দর - কোন দলে ফেলবো জানা যায় না কিন্তু স্পর্শটা বড় সুখের … এ শহর … এই ভোরের শহর বড় মায়াময় … রক্তমাংশে ভিড়ের পাওয়া না পাওয়ার একটা গতি আছে – অজান্তেই সেই শ্রোতে কাগজের নৌকোর মত ভেসে চলা … আর আজ যখন আকাশ কালো করে বৃষ্টি নেমেছে, ফেটে যাওয়া জলের পাইপ আর সামাজিক বিশ্বায়নের বৃষ্টির বেনোজল মিলে মিশে একসাথে বয়ে চলেছে এক অচেনা লক্ষের দিকে, আমার শহরের … আমার মায়াময় শহরের অপু-দূর্গাদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে চারতলার ওপর থেকে ফিস ফিস করে বলি … “লেবু পাতায় করমচা … যা বৃষ্টি … চলে যা …“ ...

এখানে সব এমনই হয়

এখানে সব এমনই হয় – যে যার মতো থাকে – যে যার মতো ভাবে – যে যার মতো চলে… দুদন্ড কাছে এসে বসবার সময় নেই কারো। চাকরি না থাকলে চাকরি খোঁজা – চাকরি থাকলে তার ঝক্কি। সময় থাকলে তা নিয়ে কি করা যায় তা নিয়ে চিন্তা – সময় না থাকলে ক্লান্তি। মন ভালো থাকলে কি করে মন আরো ভালো করা যায় – আর মন খারাপ থাকলে উল্টোপাল্টা ভাবনা … কুমড়ো লাগিয়েছিলেন – এবার তেমন হয় নি। বোধহয় পিচ গাছটার জন্য। তবে অনেক কমলা হয়েছে – ফলে ফলে নুয়ে পড়েছে - চেরি গাছটাও – পড়শীদের সকলকে দিতে হবে … ব্যাকইয়ার্ডে বসে এইসব ভাবছিলেন সুনয়নী – একটু পরে সূর্য উঠবে। এখান থেকে সূর্য ওঠা দেখতে খুব ভালো লাগে সুনয়নীর। গাছের ফাঁক দিয়ে একটু একটু করে নরম আলো এসে পড়ে … অন্ধকার সরে যায় – ঘাসের মধ্যে পড়ে থাকা শিশির চিক্‌ চিক্‌ করে … শিশুর মতো চঞ্চল। রাতের পাখীগুলো বাড়ি ফেরে দলবেঁধে – দু একটা দলছুট এসে গাছে বসে – উড়ে যায় – কোথায় যায় – কে জানে। ভিজে ভিজে হাওয়ায় আজকাল শরীরে একটা কাঁপুনি আসে। তাই একটা হালকা চাদর নিয়ে বসেন। একটু পরে সুভদ্র উঠে পড়বেন – সকালবেলার চা টা আজকাল উনিই করেন। রিটায়্যার করার পর থেকে … বলেন – “অনেক দিন তো রান্নাকরে খাওয়ালে, এবার একটু ফেরত দিই – চা টা অন্ততঃ ” ...

অমল, সূধা তোমাকে ভোলে নি ..

অমল, সূধা তোমাকে ভোলে নি … মনে রাখতে রাখতে উঠোন পেরিয়ে মাঠ ডিঙিয়ে একরত্তি সূধা একদিন বড়ো হয়ে গেল … শহরের মরে যাওয়া কৃষ্ণচুড়া, চৌকাঠের পাশে জমে থাকা জঞ্জাল, আঁট হয়ে লেপ্টে থাকা লোভী দৃষ্টি গায়ে না মেখে অভ্যেসের কানাগলি ঘুরে ঘুরে সূধা বড় হল … দুহাতে ফুলের বদলে পুরোন হয়ে যাওয়া চামড়ার ব্যাগ – তাতে টিফিন কৌটো আর কিছু জমানো দরকারি আর অদরকারি কাগজপত্র। সূধা এখন অফিসপাড়ায় চাকরি করে – প্রাইভেট কম্পানি - দুটো নাকে মুখে গুঁজে সকাল সাতটা বাইশের রানাঘাট লোকালে শিয়ালদা – গায়ে মাথায় ধুলো বালি মেখে সমস্তদিন কাজে অকাজে বসের মন জুগিয়ে চলে সন্ধে ছটা তিনের গ্যালপিং কল্যানি লোকালে মিলিয়ে যায় মফঃস্বলের আলো অন্ধকারে ...

পার্মানেন্ট অ্যাড্রেস

** এক **** কাউকে দেখলেই মনে হয় সব বলে ফেলি – লুকিয়ে রাখা বাসের টিকিট – জমিয়ে রাখা আধখাওয়া সিগারেটের টুকরো – চোখের কোন দিয়ে ক্যান্টিনের দূরতম টেবিলের নীল সালোয়ার কামিজকে মেপে নেওয়া – আদেখলার মতো ফিল্ম উৎসবে বিদেশী ছবি দেখা … কিম্বা পড়শী বৃদ্ধা মহিলার ওপর ছেলে আর ছেলের বৌ এর অনবরতঃ চিৎকার – উল্টোদিকের তাপসদার গভীর রাতের শ্যামাসঙ্গীত – কিম্বা মিষ্টুর সঙ্গে প্রথম দেখা হবার পর হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে ওঠা বিকেলটা … ...

দেখা

বিকেলের পড়ন্ত আলো এসে পড়েছে চুলে – কাঁধ ছাড়িয়ে পিঠে শিশুর মতো হাসিমুখ একগাল রোদ্দুর … কপালে চিক চিক করছে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম … মনে হয় রুমাল দিয়ে মুছে দিই … “কেমন আছিস বুনু?” ফিস ফিস করে শীতের হাওয়ার মত ওর কানে কানে … ধুলো আর ঘামে ভেজা ক্লান্ত যাপন চমকে ওঠে – এদিকে ফিরে ভেজা ভেজা সময়ের গন্ডি পায়ে পায়ে জড়িয়ে যায় … বিশ্বাস অবিশ্বাসের উথাল পাথাল দরিয়ার মধ্যে কয়েক মুহূর্ত লাগে নৌকো সামলাতে … ...

তিস্তার গল্প

তিস্তা কাঁদছে … দুপাড় ভাসিয়ে বিছানা ওলট পালট করে কাঁদছে – আমরা যারা তিস্তার কাছাকাছি থাকি তারা ওকে কাঁচের মধ্যে সাজানো অবস্থায় দেখতে পছন্দ করি … আকাশী নীল সালোয়ারে মোড়া মোমের এক পুতুল – একটু রোদ পড়লে গলে একদম জল হয়ে যাবে এমন। অথবা মধ্যবয়েসে সুন্দর আটপৌরে চাবির গোছা ঝনঝন গিন্নি –ইস্কুল মাস্টারি করে বাড়ি ফিরে ছেলেকে ইংরেজী চলন বলনে শিক্ষিত করতে ব্যাস্ত – একটু পরে মেয়ের নাচের স্কুল আর তারপর পতি পরম দেবতার সন্ধ্যার চা পানের তাড়া – এর মধ্যে এক ফাঁকে রোজগেরে গিন্নি আর তিথির অতিথি … একটু পরনিন্দা ইত্যাদি … ...

তোমরা শিক্ষিত হও ...

পাপ জম্‌ছে রাস্তায় – হাতে পায়ে মাথায় যেমন ভোরবেলার শীত জমে থাকে – তেমন পাপ .. ফুটপাথ জোড়া করে বসেছে পাপের বেসাতি … সিনেমাহলের সামনে প্রকাশ্যে চলছে দরদাম … যেন মাছের বাজার … রিকশার টুংটাং - পাশে গলির মধ্যে সভ্যতার শান বাঁধানো ঘাটে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ উপন্যাস কিম্বা আরো নিষিদ্ধ টুকরো মুহূর্ত … আর মাছির মতন ভন্‌ভন্‌ করছে সদ্য গোঁফওঠা কয়েকটি তাজা শরীর … এবং আরো অনেক মধ্যবয়েসী পোড়খাওয়া ক্ষয়াটে ভাঙা চোয়াল। অন্ধকার গলির কোনে সপ্তাহের হিসেব মিলিয়ে নিচ্ছেন পার্টির দাদারা … আর আরো ভেতরে … এলাকার অন্দরমহলে পুরোন ভাঙ্গাচোরা বাড়িটা তার শতবার্ষিকী পালন করছে লালসায় পুড়ে যাওয়া আইটেম গানের বিভঙ্গে … ...

তেপান্তরে একদিন ...

এই পথ তেপান্তরে যায় … কেউ পৌছতে পারে – কেউ পারে না … কাঁচের মতো স্বচ্ছ হাডসনের ভেতর দিয়ে ছুটে চলেছে এক ট্রেন মানুষ … সাদা, কালো, খয়েরি রঙের মানুষ … গায়ে গা ঘেসে পায়ে পা মাড়িয়ে মনে মন ঠেকিয়ে সকলের মধ্যে একদম একা একা অনেক মানুষ – ঘড়ির কাঁটা ধরে আকাশের দিকে উঠে যাওয়া এস্কেলেটরের প্রতিটি পাদানীতে ক্ষণজন্মা জীবনবোধ – সভ্যতার অহংকার। একটু পরেই অট্টালিকা জঙ্গলের সামনে এসে দাঁড়াবে এক অক্ষৌহিনী আকাশচুম্বি স্বপ্ন – শিকারের খোঁজে হারিয়ে যাবে বনের গহীনতম কোনে … ধাক্কা মারবে চেনা ও অচেনা সমস্ত বন্ধ দরোজায় … যদি পড়ে পাওয়া যায় সোনার কাঠি কিম্বা রাজকণ্যার খোঁজ! ...

লাইব্রেরী

কলকাতায় সন্ধ্যা নামে অনেক পরে – আমাদের এই মফঃস্বলে তার আগেই শীতের ভারী চাদর নেমে আসে। কুয়াশা, ধুলো আর ধোঁয়ায় মেশানো এই চাদর গায়ে দিয়ে এখানকার মানুষ হাঁটাচলা করে – ঘোরাফেরা করে – কানাকানি করে। কলকাতার মতো আমাদের মফঃস্বলের সন্ধে ততোটা রঙীন নয় – বরং বেশ খানিকটা ম্যাড়ম্যাড়ে – এবড়ো খেবড়ো রাস্তা ঘাট – ডাই করে পড়ে থাকা ইঁটের পাঁজা – আধখোলা পান-সিগারেটের দোকান থেকে ভেসে আসা দু এক কলি “কভি আলবিদা না ক’হেনা” – ঘরে ধুনো দিয়ে মশা তাড়ানো - মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সরলমতি কিশোরের টেন টিচার্স মুখস্ত করার প্রচেষ্টা – আর একটু বড়ো হওয়া পেকে যাওয়া উচ্চ মাধ্যমিক যুবকের পাড়ার বাইরে সিগারেটে শেষ টানটা দিয়ে ভালো ছেলে সেজে পাড়ায় ঢোকা। সমস্ত দিনের বিশ্ব উদ্ধারের পর কর্তারা বাড়ি ফিরছেন – চা জলখাবার খেয়ে একটু পরে আটটা-ন’টা নাগাদ আর একবার নৈশ পদচারনা করতে বেরোবেন … ...