মিছিলের সেই মুখ

মানুষ খুঁজছে মিছিলের সেই মুখ হাতে হাত ধরে উষ্ণতা ছুঁয়ে আছে ভেঙে গেছে সব লজ্জা ভয়ের আড় রাজপথ জুড়ে ভালবাসাদের বাড়ি এই বাড়িটিতে জানলা দরজা খোলা অবারিত দ্বার যখন যেভাবে খুশি এসো - নিয়ে এসো সমবেত উচ্ছাস পূণ্য সলিলে ভাসাবো অক্ষৌহিণী পূণ্য সলিলে ভেসেছে চন্দ্র ডিঙা চেনা চোরাশ্রোতে ভূল হবে না কো আর মানুষ পেয়েছে মিছিলের সেই মুখ বোনের দিব্বি - ফেরত যাবে না তো কেউ মানুষ পেয়েছে মিছিলের সেই মুখ বোনের দিব্বি - হারাবো না তোকে আর ১৬ সেপ্টেমম্বর ২০২৪ ডালাস

মেঘেদের গল্প

মেঘ বলেছে যাবো যাবো যাক - যেদিক পানে দুচোখ যায় যাক আমি কেবল তাহার জন্য বসে দরজা জানলা দুহাট করে খুলে ঘুলঘুলিতে বাসা করেছে বাবুই যত্ন করে আলসেটি রং করা আলসেটিতে চড়ুই পরিবার এ ওর সঙ্গে এক্কা দোক্কা খেলে লুকিয়ে পড়ে বৃদ্ধ বটের খাঁজে শহরে তখন শীতের অবসাদ একদিন শীত শেষ হয়ে গ্রীষ্ম আসে - আলসেমি ভেঙ্গে বরষার মেঘ ঝরে পড়ে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডে - আলপথে - অতলান্ত ড্রেনে - প্রশান্ত সাগরে কাগজের নৌকো ভেসে চলে- একা একা দূর দেশে - বহুদূর দেশে সেখানে বাবুই নেই বটবৃক্ষ নেই নেই কোনো ঘুলঘুলি কিম্বা চড়াই তবু এক পিচ্ছিল সময়ে তার সঙ্গে দেখা হয় বাদামী ফরশা চুল - শক্ত চোয়াল বন্ধুহীন গাছহীন এই শহরে তার ছায়ায় কয়েকদন্ড বসি জিরিয়ে নিই - গল্প করি পূর্বআশ্রমের মেঘ বলেছে যাবো যাবো - যাক - যেদিক পানে দুচোখ যায় যাক ডালাস, ৩০ এপ্রিল

রংহীন ক্যানভাস

কোন রং দেবো এই আকাশের গায়ে কিম্বা নদীতে অথবা অদৃশ্য বাতাসের গায়ে ? কিম্বা মানুষের অসহ্য বেদনায় পড়ে থাকা মরা মুখটির প্রতি অসহায় অপরাধ বোধে ? মরা মুখটিকে বুকে নিয়ে শহরের অলি গলি রাজপথ স্টেশন রোড আর প্রান্ত স্টেশনে ক্লান্তি ঝুলিতে ভরে বাড়ি ফেরে ক্ষত বিক্ষত যে অসময় কোন রঙে আঁকব সেই ছবি ? বরং এই সব গ্লানি আর অপরাধবোধ নিয়ে জন্ম হোক ধু ধু শাদা এক নতুন ক্যানভাস আর শয়ে শয়ে রংহীন রঙীন পাখীরা এসে জড়ো হোক হাত ধরাধরি করে এর ওর উত্তাপ তুলিতে নিয়ে এঁকে দিক বিচারের দৃপ্ত অঙ্গীকার কি রঙে আঁকব এই ছবি রংহীনতার কাছে সমস্ত রঙের বেসাতি আজ বড় ফিকে লাগে ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ডালাস 

রাজপথের কথা - ১

১। যে সিংহাসন কাঁদতে শেখেনি তার আর কোনো প্রয়োজন নেই তাকে ধুলোয় মিশিয়ে দাও পৃথিবী শান্ত হবে যে ঈশ্বর তোমাকে জড়িয়ে ধরতে পারে নি তাঁর গর্ভগৃহ বন্ধ্যা তাতে আলো জ্বলে না তার অঙ্গনে বিষাক্ত শ্বাপদের বাস আর সভ্যতার যে অহংকারী অট্টালিকা রাজপথের সামনে নতজানু হতে শেখেনি তার প্রাঙ্গণ আগাছায় পরিপূর্ণ থাকে তাকে আমি ঘৃণা করি ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ডালাস

রাজপথের কথা - ২

মেয়ে ঘুমালো চোখের জলে উঠবে না তো আর শহর জুড়ে জ্বলছে চিতা জ্বলছে অঙ্গীকার মায়ের চোখে বৃষ্টি পড়ে বাপের বুকে ব্যাথা ব্যাথার নাম পথ তাহার বুকে লেখা হচ্ছে নতুন ভবিষ্যৎ যেখানে তাঁর পড়েছে পা সেইখানেতেই দ্রোহ মুছবে যত - মুছবে কতো ? মুছতে পারো সব ? মায়ের চোখে বৃষ্টি পড়ে বাপের বুকে ব্যাথা ব্যাথার নাম পথ - মুছবে যতো - বোনের দিব্যি তাহার বুকে আঁকবো ভবিষ্যৎ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ডালাস

রাজপথের কথা - ৫

আমাদের সব মনে থাকবে আমাদের মনে থাকবে একদিন রাজপথে আগুন জ্বলেছিল আর তার উত্তাপে মেরুদণ্ডহীন সরুসৃপও নিজের পায়ে উঠে দাঁড়াতে শিখে গিয়েছিল আমাদের মনে থাকবে একদিন কারা সব রাত্রের ফুটপাথ দখল করেছিল আর সেইদিন সিঁথিপাটি চশমা মেয়েলী ছেলেটাও পাড়ার দাদার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে শিখে গিয়েছিল আমাদের মনে থাকবে সেই রংহীন পতাকাহীন মিছিলের খোঁজে হাঁটতে হাঁটতে একদিন নদীর সঙ্গে দেখা হল - তার দুচোখে রক্তের দাগ সারা গায়ে কালো ছোপ ছোপ আর দুচোখে অঙ্গার সে তখন আমরন অনশনে বসেছে - সেই শ্রোতে ভেসে ভেসে কে কোন ঘাটে গিয়ে উঠবে কে জানে কিন্তু আমাদের মনে থাকবে আমাদের সবকিছু মনে থাকবে থাকতেই হবে ১৬ অক্টোবর ২০২৪ ডালাস

রাজপথের কথা -৩

আমাকে একতাল মাটি দাও আর একবাটি রক্ত আমি তিলোত্তমার মূর্তি বানাবো আমাকে একবুক কান্না দাও আর বুকের ওপর রাখা বিশকিলো পাথর আমি তিলোত্তমার মায়ের ছবি আকবো আমাকে আকাশচুম্বী অহংকার দাও আর লাল নীল সবুজ গেরুয়া রঙের রামধনু আমি তাদের নির্লজ্জ কার্নিভ্যাল কে নর্দমায় ভাসিয়ে দেবো আমাকে শুধু একফালি রাজপথ দাও একটুকরো অন্ধকার আর একরত্তি প্রদীপের আলো একমুঠো বিশ্বাস, বিশ্ময় আর অজশ্র অজানা প্রশ্নের উপহার থরে থরে দিও - তাহাদের কিশোর উল্লাসে আমি গড়ে নেব নতুন সভ্যতা ভালোবেসে তার নাম দেবো - ”তিলোত্তমা নীড়” ২৯ সেপ্টেন্বর ২০২৪ ডালাস

রাজপথের কথা -৪

জ্বলে নি আলো বাজে নি শাঁখ বলে নি কোনো কথা আসলে কিছু বলার ই নেই আর কিম্বা অনেক কিছু বলতে চেয়ে দলা পাকিয়ে ওঠে শব্দ গুলো চোখের জলে ভাসে জলের দাগ রাস্তা দিয়ে হাঁটে যেখান দিয়ে যায় সেইখানেতেই ঘর নিরিবিলি উঠোন নয় সেটাই রাজপথ সে পথ যায় ইতিহাসের পাতায় জন্ম হয় শিশুর নাম রেখেছি ঊমা চোখের জলে - তাহাই তিলোত্তমা ১ অক্টোবর, ২০২৪ বস্টন

শুওর নিধন যজ্ঞ

আমাদের চারদিকে এখন বড় কাদা গা ঘিনঘিনে অসহ্য পোকামাকড়ের বাস দূর্গন্ধ - জমে থাকা পচা নর্দমার জল - শুওরের দাপাদাপি আর খোলা বাজারে বিক্রি হওয়া স্বপ্নদের নিচু হওয়া মাথা আমাদের চারদিকে এখন সবকিছু বড় অসহায় আর তার মধ্যে ভয়ে ভয়ে বেঁচে থাকাটাই অভ্যেস আর এইরকম এক বিধবা রাত্রে একটি গোলাপের মৃত্যু হয় কয়েকটি শুওর তার এক একটি পাপড়ি ছিঁড়ে নেয় নস্ট করে তার সবকিছু তারপর জুতোর নিচে পিষে মেরে ফেলে অসহায়তার মধ্যেও আমরা শিউরে উঠি পায়ে পায়ে বেরিয়ে আসি রাস্তায় - কোনোভাবে মনে পড়ে যায় আমি - ”মানুষ” এইসব শুওরদের সঙ্গে লড়াই করেই আমি মানুষ আমার মশালের আলো আমার কপালের চিন্তার ভাঁজ আমার উদ্দাত্ত কন্ঠে গান আমার ধরে থাকা অন্য আর একটি হাত এইসব অস্ত্র দিয়ে গত লক্ষ লক্ষ বছর ধরে আমি শুওরদের শিকার করেছি আমার অসহায়তার অন্ধকার এখন মশালের আলোতে উজ্জ্বল এই আগুনে সিদ্ধ হোক শুওরের খোঁয়াড় ১৬ই আগস্ট, ২০২৪ ডালাস ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ডালাস 

জন্মদাগ - প্রেম

অজান্তেই দেখা হয়ে গেল - গন্তব্য ছিল না ঠিক করা কিম্বা স্থান কাল পাত্র কোনোকিছুই - অথবা দায়িত্ব - দায়ভার - প্রয়োজন - এমনকি ভাগ্যের অযাচিত আশির্বাদ - কিছুই ছিল না - তবু - সময়ের শ্রোতের সাথে গড়িয়ে গড়িয়ে স্টেশন রোডের আবছায়া গন্ধ চেনা মুখ - অজান্তেই দেখা হয়ে গেল আর তারপর কিছুক্ষন রক্তক্ষরণ আলতার মত উঠোনে জানলায় অবগুন্ঠনে ... অজান্তে - অজান্তেই ... অনিকেত এক জন্মদাগ ডালাস